ঝিনাইদহে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইট ভাটায়। এতে গত পাঁচ বছরে জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর। এমনটি চলতে থাকলে তা সার্বিকভাবে সুদূরপ্রসারী বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে মত অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের।
Advertisement
জানা যায়, ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডুর হাকিমপুর গ্রামের মাঠে বেশ কিছুদিন ধরেই কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইট ভাটায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেও বন্ধ করতে পারছেন না কৃষি জমির মাটি কাটা।
কিছু অসাধু জমি মালিকের সহযোগীতায় ভাটা মালিকরা প্রতিদিন ট্রলিভর্তি মাটি নিয়ে যাচ্ছেন ভাটায়। এতে ওই জমি অসমতল হয়ে পড়ায় পার্শ্ববর্তী জমিগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ব্যহত হচ্ছে চাষাবাদ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় পাঁচ বছর আগে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার দুইশ ৩৫ হেক্টর। আর বর্তমানে তা কমে দাড়িয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার দুইশ ৩৫ হেক্টরে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি।
Advertisement
জেলায় ইট ভাটা রয়েছে ১২৯টি, এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র সাতটির। এসব ভাটার জন্য প্রতিদিন গড়ে তিন-পাঁচ হাজার ট্রলি মাটি কাটা হচ্ছে।
হরিনাকুন্ডু গ্রামের দবির মণ্ডল জানান, ধান কাটার পর থেকেই জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া শুরু হয়েছে। জমি থেকে মাটি কাটার পর পাশের জমিগুলো উঁচু হয়ে যায় তখন উঁচু জমিতে ফসল হয় না। বাধ্য হয়ে তখন জমির মাটি কেটে নিচু করতে হয়।
মাটি ব্যবসায়ী মো. হাবিল জানান, প্রতিটা এলাকার কৃষিজমি থেকেই এক-দেড় ফিট গর্ত করে মাটি কাটা হয়। জমির পার্শ্ববর্তী ভাটা মালিকদের নির্দেশে এ কাজ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটার ম্যানেজার বলেন, আমরা সরাসরি মাটি কিনি না। মাটির ব্যবসায়ীরা এসে মাটি দিয়ে যায়। জমির মালিক যদি তার জমির মাটি বিক্রি করে দেয় এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
সরকারি লালন শাহ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহব্বত আলী জানান, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার ফলে উর্বরতা যেমন কমছে তেমনি মাটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। কয়েক বছরে ইট ভাটার সংখ্যা বেড়েছে ৬০ শতাংশ, সঙ্গে কমেছে কৃষি জমি।
Advertisement
ঝিনাইদহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেদায়েত উল্লাহ জানান, কৃষিজমির মাটি কেটে নেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে, উপস্থিতি টের পেয়ে যারা মাটি কাটছিলেন তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, এর আগে হরিনাকুন্ডুর হাকিমপুর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবু জোয়ারদার নিয়ম না মেনে পুকুর খননের নামে দীর্ঘদিন ধরে মাটি বিক্রি করছিলেন। সেই মাটি কিনে ইট ভাটায় বিক্রি করছিল পাশ্ববর্তী তালবাড়িয়া গ্রামের মো. হাবিল।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ঘটনাস্থল থেকে জমির মালিককে ১৫ হাজার টাকা এবং মাটি ব্যবসায়ী মো. হাবিলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তার এক সপ্তাহ পর আবারো মাটি ইট ভাটায় বিক্রির অপরাধে মাটি ব্যবসায়ী মো. হাবিলকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কৃষিজমি রক্ষায় তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবেও বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসএমএম/এমএস