তারা দু’জন কি ভাই, বন্ধু, সৈনিক না-কি জীবনসঙ্গী? একে অন্যের হাত ধরে দীর্ঘ ১৬০০ বছর ধরে একই কবরে শুয়ে আছেন। তাদের সম্পর্ক কী? সেটা জানা নেই প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও। তবে কঙ্কাল দুটি পরীক্ষা করে তারা দেখেছেন, উভয়ই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। গবেষকরা তাদের ‘লাভারস অব মোডেনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
Advertisement
২০০৯ সালে ইতালির মোডেনায় সিরো মেনোটি কবরস্থানে ১৬০০ বছরের পুরোনো কঙ্কাল দুটি আবিষ্কার হয়। উপস্থিত জনগণ কঙ্কাল দুটির দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে ছিলেন। কারো চোখ দিয়ে আবার জল পড়ছিল নিজের অজান্তেই।
উদ্ধারের পর অবশ্য সবাই ভেবেছিলেন, এ জুটি হয়তো কোনো দম্পতির। যাদের একজন পুরুষ ও অন্যজন নারী। কারণ একটি কঙ্কালের তুলনায় আরেকটি কিছুটা ছোট ছিল।
পরবর্তীতে অবশ্য বোলগনা এবং মোডেনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমীক্ষায় প্রত্নতত্ত্ববিদরা পরীক্ষা করে দেখেন, কঙ্কাল দুটি পুরুষের। অতি পুরোনো কঙ্কাল হওয়ায় গবেষকরা তাদের লিঙ্গ নির্ধারণে বেশ বেগ পেয়েছিলেন।
Advertisement
পরে অবশ্য উভয় কঙ্কালের ডেন্টাল এনামেল থেকে প্রোটিন বের করে তারপর অবশ্য গবেষকরা নিশ্চিত হন, কঙ্কাল দুটি পুরুষের। কারণ পেপটাইড নামক অ্যামিনো অ্যাসিড শুধু পুরুষদের দাঁতের প্রোটিনেই পাওয়া যায়।
গবেষকরা বলেন, যদিও মোডেনা প্রেমিকদের মধ্যকার প্রকৃত সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে প্রাপ্তবয়স্ক দুই পুরুষকে কেন একসঙ্গে সমাধি দেওয়া হলো বা কেনই বা তারা একে অন্যের হাত ধরে রেখেছেন; তা সত্যিই কৌতূহলের বিষয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মোডেনার প্রেমিকদের সমাধিস্থ কবরের আশপাশ থেকে আরও ১১টি কঙ্কালও উদ্ধার করা হয়। এসব কঙ্কালের শরীর পরীক্ষা করে গবেষকরা আঘাতের চিহ্নও খুঁজে পান। তারা ধারণা করেন, সম্ভবত যুদ্ধের সময় তাদের কবর দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণার প্রধান ফেদেরিকো লুগলির মতে, এমন কোনো সমাধি এর আগে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি। অতীতে কয়েকটি সমাধি থেকে দম্পতির হাত ধরা কঙ্কাল অবশ্য মিলেছে; তবে তারা সবাই ছিলেন একজন নারী ও একজন পুরুষ।
Advertisement
গবেষণায় বলা হয়েছে, দুই পুরুষ হয়তো যুদ্ধ কমরেড বা বন্ধু হতে পারে। যারা সংঘর্ষের সময় একসঙ্গে মারা গিয়েছিলেন এবং একই সমাধিতে তাদের কবর দেওয়া হয়।
বিকল্প মতে, দুই ব্যক্তি হতে পারেন আত্মীয়, চাচাতো ভাই। হয়তো পারিবারিক বন্ধনের কারণে একই সমাধি ভাগ করে নিয়েছিলেন তারা। তবে ধারণা করা হয়, তারা দু’জনই একে অন্যের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন।
হিস্টোরি ডটকম/জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ