সবেমাত্র মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পিন্টারেস্ট দেখে আগ্রহ জেগেছিল ক্যালিগ্রাফির প্রতি। সেটিও পাঁচবছর আগের কথা। আর্ট শুরু করলেও কোনোভাবেই আয়ত্ত করতে পারছিলেন না হাতের নিপুণ কাজের এই দক্ষতা।
Advertisement
শুরুর দিকে রঙ-কাগজ দুটিই নষ্ট হয়েছে, সময়ও নষ্ট হয়েছে বেশ। তবে তার হাতে আঁকা ক্যালিগ্রাফি এখন যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, ডেনমার্ক, স্পেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
তরুণ এই ক্যালিগ্রাফারের নাম জাহেদা অরেজা। পড়ছেন ইন্টারন্যাশন্যাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব চিটাগাং-এর ফার্মেসি বিভাগে। যদিও চারুকলা তার পড়াশুনার বিষয় নয় তবুও গত দুইবছর প্রফেশনালি ক্যালিগ্রাফির কাজ করছেন।
করোনার বছরেও জাহেদার ৪০টির বেশি ক্যালিগ্রাফি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ক্যালিগ্রাফি কিনে নিয়েছেন দেশের বাইরের ক্রেতারা।
Advertisement
পুরোপুরি ব্যতিক্রম শিল্পের জায়গা এটি। চারুকলাতেও পড়েন না তিনি। প্রশিক্ষকও নেই। কিভাবে আয়ত্ত করলেন এমন নিপুণ কাজের দক্ষতা- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘যখন শুরু করেছিলাম তখন ইউটিউব আর গুগলই ছিল ভরসা। ইউটিউব দেখে প্রথমে আঁকতে চেষ্টা করতাম। নিজে নিজে দেখেই ধরণগুলো আয়ত্ত করেছি। আর ইনস্ট্রাগ্রামে কিছু তুর্কি ক্যালিগ্রাফারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা অনেক দূরে থেকেও অনেক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করতে হয়। তারপর কম্পোজিশন প্রস্তুত করতে হয়। এরপর রঙ দিতে হয়। যদি দিনে ৭-৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হয় তাহলেও মাঝারি একটি কাজ করতে প্রায় সাতদিন লেগে যায়। ছোট কাজ হলে ৩-৪ দিনেই হয়ে যায় একটি ক্যালিগ্রাফি।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্যালিগ্রাফির চাহিদা ও ধরন ভিন্ন হয়। অটোমানদের সময়কার প্রাচীন স্টাইলে ক্যালিগ্রাফি যেমন ছিল সেই ধরনের ক্যালিগ্রাফি করতে আগ্রহী অরেজা। তবে বাংলাদেশে প্রাচীন ওই স্টাইলটি বেশিরভাগেরই পছন্দ নয়।
বাংলাদেশের মানুষের পছন্দ কালারফুল মডার্ন ক্যালিগ্রাফি। তাই এখন মডার্ন ক্যালিগ্রাফিই করছেন তিনি। বন্ধু মহলে কেউ কেউ সাহস দিলেও নিষেধ করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু এখন সবাই বাহবা দেন।
Advertisement
মায়ের টুকিটাকি পেইন্টিং থেকেই রঙয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে জাহেদার। তবুও শুনতে হয়েছে মায়ের বকুনি। সবাই বলতো ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিতে। কিন্তু সকল বাধা পেরিয়ে এখন ক্যালিগ্রাফার হয়ে উঠেছেন তিনি।
সালমান শাকিল/এসএমএম/এআরএ/জেআইএম