একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার মামলায় ১৮ আসামির বিচার চলছে। এর আগে ট্রাইব্যুনালে সর্বমোট ২১টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার পর আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। এছাড়া অপেক্ষামাণ রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা) ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার পর এদের দণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলার কার্যক্রম চলছে। ফরমাল চার্জ দাখিল, অভিযোগ গঠন এবং সাক্ষী গ্রহণ শেষে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনালের ৪ মামলা ছাড়াও যশোর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও কক্সবাজারের অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দিন নির্ধারিত রয়েছে।হবিগঞ্জ জেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। অপর এক মামলায় আসামি জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে গত ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়েছে। ১৮ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। একই মামলার ৮ আসামির মধ্যে দু’জন অ্যাডভোকেট শামসুল আলম এবং এস এম ইউসুফ আলী কারাগারে আছেন। পলাতক বাকি ৬ জন হলেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আব্দুল হান্নান, মো. আব্দুল বারী, মো. হারুন ও মো. আবুল কাসেম। অন্য এক মামলায় কিশোরগঞ্জের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে গত ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে গত ৪ নভেম্বর সাক্ষ্য-গ্রহণ শুরু হয়েছে। একই মামলায় পাঁচ আসামি হচ্ছেন জেলার করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। চতুর্থ মামলায় নেত্রকোনার সাবেক দুই মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২ মার্চ অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে তাদের বিচারকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ৫ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মামলার (আইও) তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান খানের জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে মামলা সর্বশেষ পর্যায় যুক্তি-তর্ক শুরু হবে। এর পরের পর্যায় হলো রায় ঘোষণা। গত বছরের ১২ আগস্ট আতাউর রহমান ননী এবং ওবায়দুল হক তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেত্বত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টে আপিল শুনানির জন্য রয়েছে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আব্দুস সুবহান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মীর কাশেম আলী, জাতীয় পাটির নেতা সৈয়দ কায়সার আহমদ, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনের মামলা।এফএইচ/জেডএইচ/একে/পিআর
Advertisement