যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী। তাই প্রেসিডেন্ট হলেও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারেননি ট্রাম্প, এমনটাই মত সমালোচকদের। ক্ষমতার শেষবেলায় এসে সেধরনের আচরণের আরও একটি নজির রাখলেন ট্রাম্প। এবার তার সংস্কার নীতির যাঁতাকলে পড়েছে পাখি সুরক্ষা আইন।
Advertisement
শতবর্ষী আইনটিতে পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর কারণ হলে তার জন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল জরিমানার বিধান ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সেই ধারায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে পাখিমৃত্যুর কারণে কোনও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আর অপরাধের অভিযোগ আনা যাবে না।
গত বছরের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জেলা জজ আদালত পরিযায়ী পাখি সুরক্ষা আইন পরিবর্তনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শিল্পগোষ্ঠীর অনুরোধে নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন তিনি।
অবৈধ শিকারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পাখির সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় ১৯১৮ সালে পাস করা হয় পরিযায়ী পাখি সুরক্ষা আইন। এর মাধ্যমে দেশটিতে এক হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
Advertisement
যুক্তরাষ্ট্রের মাছ ও বন্যপ্রাণী পরিষেবার হিসাবে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে দেশটিতে প্রতিবছর ৪৫ কোটি থেকে ১১০ কোটি পাখি মারা যায়, গোটা উত্তর আমেরিকা হিসাব করলে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭২০ কোটিরও বেশি।
গত কয়েক দশকে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় পাখিমৃত্যু কমানোর চেষ্টা করছে। তবে শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে অনেকেই সেই দায়বদ্ধতার বাইরে চলে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পাখি সুরক্ষা আইনে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় জরিমানাটি দিয়েছে ব্রিটিশ তেল কোম্পানি বিপি। ২০১০ সালে মেক্সিকো উপকূলে তেল ছড়িয়ে পড়ায় প্রাণ হারায় এক লাখেরও বেশি পাখি। একারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ কোটি ডলার জরিমানা গুণতে হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার সেই বিধি তুলে নেওয়ায় ক্ষেপেছেন পরিবেশবাদীরা। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির নোয়া গ্রিনওয়াল্ডের মতে, এর মাধ্যমে তেল ও অন্য কোম্পানিগুলোকে পাখিহত্যার লাইসেন্স তুলে দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
Advertisement
তিনি বলেন, বিদ্যুতের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে, তেল বর্জ্যের গর্তে ডুবে অথবা সহজে প্রতিরোধযোগ্য ছিল এমন সব কারণে অসংখ্য পাখি মারা যাবে।
পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর তার কাছে পরিযায়ী পাখি সুরক্ষা আইনকে আগের অবস্থানে আনার আবেদন জানাবেন তারা।
সূত্র: আল জাজিরা
কেএএ/এমকেএইচ