ধর্ম

হজরত ইবরাহিম আদহামের সেরা ৫ উপদেশ

হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি একজন সুফি সাধক ব্যক্তি ছিলেন। ক্ষমতা ও সম্পদে প্রভাবশালী হওয়া সত্বেও তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন। নিরহংকার জীবনে তিনি গোনাহমুক্ত জীবনের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট ছিলেন। তার পাঁচটি উপদেশ যে কাউকে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। কী সেই পাঁচ উপদেশ?

Advertisement

একবার এক লোক হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম রাহমাতুল্লাহু আলাইহি কাছে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভের জন্য এসেছিলেন। ওই ব্যক্তি হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহামকে বললেন, ‘আমি বড় অপরাধী। আমাকে এমন কিছু উপদেশ দিন, যাতে আমি পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারি।

হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনের চমৎকার পাঁচটি উপদেশ তুলে ধরেছিলেন। তাহলো-

> আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে বিরত থাকাঅন্যায় বা অপরাধ করতে ইচ্ছা করলে আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে কিছুই না খাওয়া। এ কথা শুনে লোকটি বিস্মিত হয়ে বলল- ‘দুনিয়ার সব রিজিকই মহান আল্লাহর দেয়া। তাহলে তা কী করে সম্ভব?’যদি তা সম্ভব না হয় তবে আল্লাহর দেয়া রিজিক খেয়ে কীভাবে অপরাধ করা সম্ভব? সুতরাং আল্লাহর দেয়া রিজিক খেতে হলে অবশ্যই অন্যায় বা অপরাধ ছেড়ে দেয়া। কেননা তাঁর দেয়া রিজিক খেয়ে তাঁর অবাধ্যতা করার কোনো সুযোগই নেই।

Advertisement

> আল্লাহর জমিন থেকে বের হয়ে যাওয়াযদি পাপ করতে হয় তবে, আল্লাহর জমিন থেকে বের হয়ে গিয়ে পাপ করা। এ কথা শুনেও লোকটি আগের চেয়েও বেশি হতবাক হয়ে বলল- ‘হে ইবরাহিম! তা কী করে সম্ভব? পুরো জমিনই তো মহান আল্লাহর!এর মানে হলো- ‘তুমি আল্লাহর জমিনে অবস্থান করে তাঁরই বিরুদ্ধাচরণ করবে? না, তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং জমিনে বিচরণ করতে হলে অবশ্যই পাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই।

- আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়াপাপ করার ইচ্ছা থাকলে আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে হবে। এ কথা শুনেও ওই ব্যক্তি বলল-এমন কোনো স্থান আছে কি যা মহান আল্লাহ তাআলার দৃষ্টির বাইরে? আল্লাহ তাআলা তো ঘোর অন্ধকারের মাঝে পিপড়ার পদচারণা ও পদশব্দ দেখেন এবং শুনেন।যদি আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকতে তবে গোনাহ বা অন্যায় ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

> মৃত্যুর ফেরেশতার কাছে সময় নেয়াপাপ করার ইচ্ছে থাকা ব্যক্তি কি পারবে মৃত্যুর ফেরেশতার কাছ থেকে সময় নিতে? এ কথা কি বলার অবকাশ আছে যে, আমাকে আরও কিছু সময় দাও বা আমার প্রাণ হরণ করিও না।এ কথা শুনে লোকটি বলল- তা কী করে সম্ভব? কখনোই মৃত্যুর ফেরেশতা তার দায়িত্ব পালনে দেরি করবে না। সুতরাং মুক্তির পথ এটকাই গোনাহমুক্ত জীবন যাপন করা। কারণ মৃত্যুর ফেরেশতা সব সময় প্রাণ নিতে প্রস্তুত। যে কোনো সময় হতে পারে মৃত্যু। তাই গোনাহের কাজ ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়।

> জাহান্নামের দায়িত্বে থাকা ফেরেশতা থেকে মুক্তি চাওয়াগোনাহমুক্ত জীবন লাভে পরামর্শ চাওয়া ব্যক্তি সবশেষ পরামর্শ শুনা মাত্র কেঁদে ওঠলেন। আর বললেন- তা কী করে সম্ভব? জাহান্নামের দায়িত্বশীল ফেরেশতা কি সাজা থেকে মুক্তি দেবে?এবার হজরত ইবরাহিম বিন আদহামে কাছে পরামর্শ চাওয়া ব্যক্তি বলতে লাগলেন-‘হে ইবরাহিম! থামো, যথেষ্ট হয়েছে। গোনাহমুক্ত জীবন লাভে, পাপাচার থেকে বিরত থাকতে এ পাঁচটি উপদেশই যথেষ্ট।আমি তাওবাহ করছি। যাতে জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত সব পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারি। গোনাহমুক্ত জীবন গঠন করতে পারি।

Advertisement

মনে রাখা জরুরিআল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে বিরত থাকা, আল্লাহর জমিন থেকে চলে যাওয়া, আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া, মৃত্যুর ফেরেশতার কাছে সময় নেয় এবং জাহান্নামের দায়িত্বশীল ফেরেশতাকে তার কাজ থেকে বিরত রাখার শক্তি ও সামর্থ কারোর নেই।

সুতরাং এ পাঁচ কাজ যথাযথভাবে আদায় করতে হলে, অবশ্যই পাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই। উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথভাবে আদায়ে পাপ ছেড়ে দেয়াই মুমিন মুসলমানের অন্যতম কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার জমিনে বিরচরণ করে, তার দেয়া রিজিক খেয়ে এবং তাঁরই দৃষ্টির মধ্যে থেকে গোনাহমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ