ধর্ম

মুহাম্মাদ সা. অমুসলিমদের দৃষ্টিতেও সেরা ব্যক্তিত্ব!

পৃথিবীর বুকে সেরা ও প্রশংসনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী কে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বহুল প্রচলিত একটি আরবি প্রবাদ আছে যে- ‘আল-ফাদলু মা শাহিদাত বিহিল আদাউ অর্থাৎ ওই ব্যক্তি সত্যিকারের সেরা; যার পক্ষে চরম শত্রুও সাক্ষ্য দেয় বা প্রশংসা করে’।

Advertisement

মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সেই ব্যক্তি, যার প্রশংসা শুধু মুসলিমরাই করে না বরং তার জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত সব ধর্ম-জাতিগোষ্ঠী ও বর্ণের মানুষ তাকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ মনে করেন।

বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ধর্মের বড় বড় স্কলারদের মুখে প্রশংসায় ভাসছেন বিশ্বনবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব উত্তম চরিত্র, সততা, সহানুভূতি, সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং নিখুঁত সব গুণাবলীর কারণে তিনি অমুসলিমদের মুখে প্রশংসায় ভাসছেন। যার কিছু তুলে ধরা হলো-

> গুগলসম্প্রতি ফ্রান্সে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঘৃণ্য ধৃষ্টতা দেখানোর পর গুগল র‌্যাংকিংয়ে তাঁকে বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে দেখানো হয়। সে সময়-‘who is the best man in the world?- হু ইজ দ্য বেস্ট ম্যান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ লিখে সার্চ করলেই যে তালিকা বা উত্তর চলে আসে, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রথম নামটি হলো ‘মুহাম্মাদ সা.। আর তখন দেখানো হয়-‘Best Man In The World ’Prophet Muhammad’. অর্থাৎ নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিশ্বের সেরা মহামানব।’ যা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়।

Advertisement

> এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাবহু তথ্যে সমৃদ্ধ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে সফল নবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাতে একজন লেখক লিখেছেন-‘পৃথিবীর সব ধর্মের সকল ধর্মীয় ব্যক্তিদের তুলনায় মুহাম্মদ সা. সবচেয়ে সফল।’

দার্শনিক মার্কস ডাডপশ্চিমা দার্শনিক মার্কস ডাড এর মতে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অভিজাত ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘একজন সম্ভ্রান্ত আরবের চরিত্র যেমন হওয়ার প্রয়োজন ছিল, মুহাম্মাদ সা.-এর চরিত্র ঠিক তেমন-ই সুন্দর ছিলো। তিনি ধনী-গরিবকে মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করতেন না। নিজের অধীনস্ত লোকদের খেয়াল রাখা এবং সেবার ক্ষেত্রেও খুব আন্তরিক ছিলেন।

> দার্শনিক কাউন্ট টলস্টয়রুশ দার্শনিক কাউন্ট টলস্টয়-এর মতে, মুহাম্মদ সা. ছিলেন ওই সব মহান সংস্কারকদের অন্তর্ভূক্ত; যারা জাতির ঐক্যের জন্য অনেক সেবা করেছেন। তাঁর গর্ব করার জন্য এটাই যথেষ্ঠ যে-‘তিনি একটি পাশবিক সমাজকে সত্যের আলোর দিকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি জাতিকে সহাবস্থান ও আত্মবিসর্জন অবলম্বনে অনন্য এক জীবনের শিক্ষা দিয়েছেন। তাদের জন্য উন্মোচন করেছেন উন্নতি ও সভ্যাতার এক নতুন পথ। আশ্চয্যজনক ব্যাপার হলো- এমন গুণের মানুষ পৃথিবীতে আর আগমন করেনি।’

> ড. গৌডিয়াড. গৌডিয়া বলেন, মুহাম্মদ সা. সব সময় সবার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। তাঁর দয়া ও উদারতা ছিল সীমাহীন। উম্মতের সংশোধনের চিন্তায় সব সময় নিয়োজিত থাকতেন। তিনি ছিলেন জাতির জন্য এক অনন্য উদাহরণ এবং প্রবাদপ্রতীম। তাঁর প্রকৃতিতে গর্ব ও অহংকারের লেশমাত্র ছিল না। এমনকি নিজ সঙ্গীদের কৃত্রিম শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনে নিষেধ করতেন।

Advertisement

> মহাত্মা সত্য দিহারিমহাত্মা সত্য দিহারির মতে, মুহাম্মাদ সা. ছিলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। ইসলাম ধর্মের মহান এই নেতার জীবনী বিশ্বকে অমূল্য পাঠ শিক্ষা দান করে। তাঁর জীবনের প্রতিটি বাঁক এবং অবস্থানে বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় শিক্ষা রয়েছে। যাদের দেখার মতো চোখ আছে, বোঝার মতো মেধা আছে এবং অনুভূতিশীল হৃদয় আছে তাঁরা মুহাম্মাদ সা.-এর জীবন থেকে অনেক কিছু-ই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

> অধ্যাপক মার্গুয়েলিসলেখক অধ্যাপক মার্গুয়েলিসের মতে, মুহাম্মদ সা. সম্মানযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি এমন অনন্য এক জীবনের অধিকারী ব্যক্তি। যার দীর্ঘ জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। তাঁর জীবনজুড়ে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রাপ্তির বিপুল অধ্যায় রয়েছে।

> গাডফ্রি হেইগেনসমি. গাডফ্রি হেইগেনস-এর মতে, মুহাম্মাদ সা. যেমন অভিজাত বংশ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তেমনি তার সঙ্গীদের অনেকেই প্রায় অভিজাত বংশ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।তিনি বলেন, ‘যদিও মুহাম্মাদ সা. এবং আমাদের যিশু (হজরত ঈসা আ.)-এর প্রাথমিক জীবনের কিছু চিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে দুজনের এমন অনেক বিষয় আছে যা একেবারেই আলাদা।যিশুর ওপর ঈমান গ্রহণকারী ১২ হাওয়ারি সমাজের নিরক্ষর ও অজ্ঞ ছিল। পক্ষান্তরে মুহাম্মদের প্রতি ঈমান গ্রহণকারী সাহাবাদের মধ্যে (হজরত) জায়েদ এবং বেলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) ছাড়া অন্য সবাই সমাজের সম্ভ্রান্ত, সম্মানিত ও অভিজাত শ্রেণির লোক হিসেবে পরিগণিত ছিলো।এদের মধ্যে তাঁর পরিবারেরও কিছু লোক ছিলো-যারা খেলাফতের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাপতিত্ব ও সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছিলেন।

> প্রফেসর হগপ্রখ্যাত জার্মান প্রফেসর হগ-এর মতে, মুহাম্মাদ সা. ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। মহান স্রষ্টার সৃষ্টির সেবা ও উন্নত চরিত্র গঠনে মুহাম্মদ যে শিক্ষা দিয়েছেন আমি তা গভীরভাবে অধ্যায়ন করেছি। এ থেকে আমার অনুভূতি এই যে-‘যদি কোনো অমুসলিমও ইসলামের পথনির্দেশনা মেনে চলে তাহলে সে জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারবে।’আমার মত হলো-বর্তমান সমাজকে সংস্কার করতে চাইলে ইসলামী শিক্ষার প্রবর্তন ও প্রচলন ঘটানো প্রয়োজন।

> মহাত্মা গান্ধীভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, মুহাম্মাদ সা. ছিলেন নৈতিকতা শিক্ষাদানকারী অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি বলেছেন-‘আমি বিশ্বের সব ধর্ম সম্পর্কেই পড়াশোনায় অভ্যস্ত। ইসলামকেও গভীরভাবে অধ্যায়ন করেছি। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ সা. বিশুদ্ধ নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানবতাকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন, সাম্যের শিক্ষা দিয়েছেন।‘আমি পবিত্র কুরআনের অনুবাদও অধ্যায়ন করেছি- তাতে শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং সবার জন্য উপকারী দিকনির্দেশনা রয়েছে।’

> অ্যানি বেস্টনহোম লীগের প্রতিষ্ঠাতা মিসেস অ্যানি বেস্টন –এর মতে, মুহাম্মাদ সা. একজন মহান নেতা। অন্যান্য ধর্মের ওপর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও পৃথক হওয়ার কারণ হলো- ইসলামের মহান নেতা মুহাম্মদ সা.-এর জীবনে কোনো অস্পষ্টতা ও রহস্য নেই। যা অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের জীবনে পাওয়া যায়।

> জর্জ বার্নার্ড শআইরিশ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব জর্জ বার্নার্ড শ-এর মতে, মুহাম্মাদ সা. ছিলেন সমস্যা দূরকারী। পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে রাখা বর্তমানের সব সমস্যা দুরীকরণের একটাই পদ্ধতি, তা হলো- মুহাম্মাদ সা.কে গাইড বা নেতা হিসেবে মেনে নেয়া।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপারে ভিন্ন ধর্মের বিশ্ববিখ্যাত কিছু ব্যক্তির মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো মাত্র। যুগে যুগে সব বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিরাই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা করেছেন। আর আল্লাহর ঘোষণায় তিনি জগতবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ(ওহে রাসুল!) আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমতস্বরূপই পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে জীবনের প্রতি কাজে তাকে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস