জরুরি ব্যবহারের জন্য একদিনেই করোনাভাইরাসের দু’টি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। এর একটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড, অপরটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। অক্সফোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে কোভিশিল্ড উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এটি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না হলেও ভারতীয়দের আবিষ্কৃত কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কারণ সেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই এখনও শেষ হয়নি, নেই সুরক্ষা সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্যও।
Advertisement
বিভিন্ন মহলের দাবি, কোভ্যাক্সিনকে তড়িঘড়ি অনুমোদন দিয়ে একপ্রকারে বিপদ ডেকে আনছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে নানা কথা বলে মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা।
সর্বভারতীয় মেডিক্যাল সংস্থা এইমসের কর্মকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ভারতে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচিতে প্রথমে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ব্যবহার করা হবে। বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে কোভ্যাক্সিনকে। কোভিশিল্ড ব্যবহারের মধ্যেই কোভ্যাক্সিনের আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ভি জে সোমানি দাবি করেছেন, প্রায় আট হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে কোভ্যাক্সিন ভালো ফলাফল দেখিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ২৫ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ইতোমধ্যেই ২২ হাজার ৫০০ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী কোভ্যাক্সিনকে আপাতত নিরাপদ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে অনুমোদন মিললেও কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Advertisement
ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিনটির অনুমোদনের পক্ষে সাফাই গেয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, সুরক্ষা নিয়ে ন্যূনতম দুশ্চিন্তা থাকলে আমরা কোনও কিছুর অনুমোদন দিতাম না। ভ্যাকসিনগুলো ১১০ শতাংশ নিরাপদ।
তবে এই কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি অনেকেই। সমালোচকদের মতে, কোভ্যাক্সিনকে আগেভাগেই অনুমোদন দিয়ে বড় ভুল করেছে ভারত সরকার।
কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর এক টুইটে বলেছেন, কোভ্যাক্সিনের এখনও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়নি। তার আগেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি বিপজ্জনক হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দয়া করে বিষয়টি স্পষ্ট করুন। পুরো ট্রায়াল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
এমন বিতর্কের মুখে এইমস দিল্লির পরিচালক বলেছেন, আচমকা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ভারত বায়োটেকের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে। তাছাড়া, সিরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর (ডিসিজিআইয়ের তথ্যমতে, কোভিশিল্ড ৭০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কার্যকর) সে বিষয়ে যদি নিশ্চিত না হই, তখনও এটা (কোভ্যাক্সিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখে ভ্যাকসিন অনুমোদনে স্পষ্টভাবে জরুরি পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। তাদের ট্রায়াল চলবে এবং তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একবার তথ্য চলে এলে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতার বিষয়ে আমরা আরও নিশ্চিত হবো।
তাহলে প্রথম পর্যায়ে কি ভারতে শুধু কোভিশিল্ড ব্যবহার হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে কোভিশিল্ড প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের পাঁচ কোটি ডোজ তৈরি রয়েছে, এরপর আরও দিতে পারবে। এ পর্যায়ে আমরা তিন কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেবো। ধাপে ধাপে এর সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে এবং তার মধ্যে ভারত বায়োটেকের তথ্যও চলে আসবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
কেএএ/এমকেএইচ