ধর্ম

যে ৪ আমল থেকে কখনো বিরত থাকা যাবে না

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা ছাড়া মুমিনের জন্য বিকল্প কোনো পথ নেই। যারা আল্লাহকে ভুলে অন্য পথ গ্রহণ করে তারা বিপথগামী। পথভ্রষ্টদের তুলনায় মুমিনের কথা ও কাজ কেমন হবে তা তুলে ধরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-‘এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও- আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতিত আর কারো দাসত্ব নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।’ (সুরা তাহওবাহ : আয়াত ১২৯)

Advertisement

যেসব বান্দা এ আয়াত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে চায়, তাদের রয়েছে ৪টি বিশেষ আমল তথা কাজ। যা থেকে কখনও বিরত থাকা যাবে না। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন সুরায় এ নসিহতগুলো করেছেন। তাহলো-

- শোকরগুজার করাকখনো আল্লাহর শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় থেকে নিজেকে বিরত রাখা যাবে না। সুখে-দুঃখে সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা জরুরি। তবেই আল্লাহ তার নেয়ামত বাড়িয়ে দেবেন। বান্দার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ওয়াদা এমনই-وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ‘যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

- সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করাকখনো নিজেকে মহান আল্লাহ তা্আলার স্মরণ থেকে বিরত রাখা যাবে না। কারণ বান্দা যখন আল্লাহকে ভুলে যায় তখন আল্লাহও বান্দাকে ভুলে যায় (নাউজুবিল্লাহ) আর বান্দা যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাআলাও বান্দাকে স্মরণ করেন। এটিও মহান আল্লাহ পাকের ঘোষণা-فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلاَ تَكْفُرُونِ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ ( সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)

Advertisement

- সব সময় আল্লাহর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করাহাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রাগান্বিত হন।’ তাহলে চিন্তা করার বিষয়, আল্লাহ যার প্রতি রাগান্বিত হন, তার অবস্থা কি হতে পারে?

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বান্দাকে তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার নির্দেশ ও উপদেশ দেন। আল্লাহর কাছে কখনো নিজেকে দোয়া করা থেকে বিরত রাখা যাবে না। যদি কেউ আল্লাহর কাছে দোয়া না করেন, তবে তিনি বিপদে আর বান্দার ডাকে সাড়া দেবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ‘আর তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে (অর্থাৎআামাকে না ডাকে) তারা দ্রুতই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)

- আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাআল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে বার বার তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন। বার বার ক্ষমা প্রার্থনার প্রতিদান ও প্রাপ্তির কথাও বলেছেন। সুতরাং কখনো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা যাবে না। তবেই আল্লাহ বান্দাকে নাজাত বা মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ‘আর আল্লাহ কখনই তাদের ওপর আজাব নাজিল করবেন না; যতক্ষণ (হে রাসুল!) আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। আর তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আল্লাহ তখনও তাদের ওপর আজব দেবেন না।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৩৩)

কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াতে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, কখনো মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, স্মরণ, দোয়া বা প্রার্থনা করা এবং ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না। আল্লাহর শুকরিয়া, স্মরণ, দোয়া প্রার্থনা ও ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমেই বান্দার দুনিয়া ও পরকালের সব অনুগ্রহ ও সফলতা লাভ করবে।

Advertisement

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, এভাবে প্রার্থনা করা- হে আল্লাহ! আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। তোমাকে যথাযথভাবে স্মরণ ও তোমার জিকির করার তাওফিক দাও। তোমার কাছে সঠিক নিয়মে দোয়া করার তাওফিক দাও এবং তোমার কাছে যথাযথ ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা কোর তাওফিক দাও।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালে তার প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়ার জন্য উল্লেখিত আমলগুলো দিয়ে নিজেদের জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, জিকির-আজকার, দোয়া করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস