বিশ্বজুড়ে নামি দামি ব্র্যান্ডের পোশাক উৎপাদন করে সুনাম অর্জন করেছে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড। দীর্ঘদিনের পোশাক ব্যবসার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে নিয়ে আসে লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’। ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে ভালো মানের পোশাক পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা ‘সারা’ এখন একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে ‘সারা’র পোশাকের দাম, ফলে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে এই ব্র্যান্ড। সব বয়সী নারী ও পুরুষের পাশাপাশি শিশুদের জন্য বাহারি পোশাকে সাজানো হয় ‘সারা’র শোরুমগুলো।
Advertisement
ব্র্যান্ডটির যাত্রা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন ‘সারা’ লাইফস্টাইল ও স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম খালেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড কারখানা
জাগো নিউজ: করোনায় সারাবিশ্ব এক সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, স্নোটেক্স ও ‘সারা’য় এর প্রভাব কতটুকু পড়েছে?
Advertisement
এসএম খালেদ: করোনা বিশ্বব্যাপী সবাইকেই ওলট-পালট করে দিয়েছে। তারপরও আমাদের দেশ ভালো করছে, আমরাও চেষ্টা করছি ভালো করার। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ‘সারা’র পাঁচটি শপ চালু ছিল। আমাদের ইমেডিয়েটলি যেটা প্ল্যান ছিল, ২০২০-এ আমরা আরও ২৫টি শপ করব, সেটা করতে পারিনি। তারপরও আমরা মোটামুটি এগিয়ে যাচ্ছি। যদিও স্নোটেক্সও করোনার প্রথম এক মাসে প্রোডাকশন চালিয়ে যেতে পারেনি, তবে সরকার-বিজিএমইএ’র সাপোর্টসহ সবার সপোর্টে এখন পর্যন্ত আমরা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারছি। এখনো আমাদের পরিবার থেকে কাউকে হারাতে হয়নি, আমরা মোটামুটি চালিয়ে যেতে পারছি।
জাগো নিউজ: বিভিন্ন কোম্পানি, বিশেষ করে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের চাকরির অনিশ্চয়তা আমরা সব সময় লক্ষ্য করেছি। সেক্ষেত্রে স্নোটেক্স কিছুটা ভিন্ন, এ ধরনের অভিযোগ কখনো ওঠেনি। ১২ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানের এতো বিশাল চাপ কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?
এসএম খালেদ: আমাদের চতুর্থ ফ্যাক্টরি চালু হয় ২০১৯ সালে। সেটা একটা গ্রিন ফ্যাক্টরি ছিল। আমরা চীন এবং ভিয়েতনামের বিভিন্ন ভালো ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করি। এর মধ্যে চীনে ভালো পাঁচটি এবং ভিয়েতনামেও পাঁচটি ভালো ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করি। সেখানকার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের চতুর্থ ফ্যাক্টরি আমরা দাঁড় করাই। সেই ফ্যাক্টরিটি বেশ এফিসিয়েন্ট ফ্যাক্টরি, সেভাবেই আমরা দাঁড় করাচ্ছি। সব এফিসিয়েন্ট মেশিন আমরা এখানে একসঙ্গে জড়ো করেছি। গ্রিনের কারণে আমাদের ইউটিলিটি কস্ট একটু কম। আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ দুটি ফ্যাক্টরিই গ্রিন ফ্যাক্টরি। দুটি ফ্যাক্টরিতে ৮০ লাইন করে ১৬০ লাইনের ফ্যাক্টরি। সেটা এফিসিয়েন্ট এবং গ্রিন হওয়ার কারণে কাস্টমারদের ভালোই হেল্প করতে পারছি, কম দামে দিতে পারছি, ভালোভাবে কাজ করতে পারছি। তাতে গত ছয় মাসে দু-তিন হাজার নতুন সদস্য আমাদের সঙ্গে জয়েন করে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে আরও তিন-চার হাজার সদস্য আমাদের সঙ্গে জয়েন করবে। সবকিছু মিলিয়ে একটি এফিসিয়েন্ট ফ্যাক্টরি হওয়ার কারণে আমরা গত ছয় মাস ভালো করেছি এবং আগামী ছয় মাসও ভালো করবো। আমাদের চলা খুব একটা খারাপ হবে না।
স্নোটেক্স আউটারওয়্যার কারখানায় প্রস্তুতকৃত পোশাক
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনাদের ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখেছি, আপনাদের পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, কীভাবে এতো বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করছেন?
এস এম খালেদ: বিজিএমইএ’র ফ্যাক্টরি ওপেনিং সংক্রান্ত একটি কমিটি হয়েছিল, সেখানে আমরা মেম্বার হয়ে ভিয়েতনাম বা চায়না কীভাবে ফ্যাক্টরি চালু রাখছে বা শ্রীলঙ্কা-ভারত কীভাবে ফ্যাক্টরি চালু রাখছে, আইএলও কী গাইডলাইন দিচ্ছে ফ্যাক্টরি চালু করার, সব প্রিপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকে ফ্যাক্টরি চালু রাখি। ফ্যাক্টরিটা যেভাবে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী চালু রাখতে হয়, সেভাবে যত রকমের ব্যবস্থা রাখতে হয়, সব ব্যবস্থা রাখি এবং তাতে এখনো সবাই সুস্থভাবে কাজ করতে পারছে। স্নোটেক্সের গত ২৫ বছরের যাত্রায় কখনোই জানুয়ারির স্যালারি ফেব্রুয়ারি, ফেব্রুয়ারির স্যালারি মার্চে দিতে হয়নি। করোনাকালে প্রথম তিন মাস যেহেতু সরকার থেকে এসেছে, সে সময় স্যালারি সরকার যেভাবে দিয়েছে সেভাবে দিয়েছি। অন্যথায় ফিন্যান্সিয়ালি সবাইকে সবকিছু যথাসময়ে দেই এবং সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করি। ফলে সবাই একসঙ্গে আমরা হ্যাপিলি কাজ করতে পারছি।
জাগো নিউজ: আমরা শুনেছি এই করোনার মধ্যেও আপনারা কর্মী সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি বিদেশি ক্রেতার অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে, সেখানে আপনারা কীভাবে এই ব্যতিক্রম সাহসী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
এসএম খালেদ: যখন জীবনের প্রথম ব্যবসা শুরু করি আমাদের প্রথমে একজন জয়েন করে, তারপর দুজন। সেটা কয়েক বছর পর ১০ জন হয়। প্রথম ১০ জনের মধ্যে যারা, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এখনো আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। শত শত হাজার হাজার স্নোটেক্স মেম্বার বছরের পর বছর একসঙ্গে কাজ করছি। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্যা ভাগ করি। সবাই একসঙ্গে আমাদের সমস্যার সমাধান করি। সেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং এটার কারণেই গ্রোথও হচ্ছে। গত ২০ বছরে কোনো নেগেটিভ গ্রোথের রেকর্ড নেই। প্রতি বছরই পজিটিভ গ্রোথ ছিল। এ বছর হয়তো খুব বেশি গ্রোথ না করলেও গত বছরের কাছাকাছি একটা পর্যায়ে ব্যবসা রাখতে পারব বলে আশা করছি। তারপরও আমাদের যে গ্রিন ফ্যাক্টরি ও এফিসিয়েন্ট ফ্যাক্টরি এবং অনেক মেম্বার, একসঙ্গে সেটা মিলিয়ে এই পজিটিভ গ্রোথকেই ধরে রাখতে পারছি।
সব শ্রেণির ক্রেতাদের কাছে ভালো মানের পোশাক পৌঁছে দেয়াই লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’র লক্ষ্য
জাগো নিউজ: আপনাদের ফ্যাক্টরিটি গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এই ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’র পরিকল্পনা কীভাবে এলো? আর কীভাবে তা বাস্তবায়ন করছেন?
এসএম খালেদ: আমাদের তিন নম্বর ফ্যাক্টরিটি গ্রিন ফ্যাক্টরি। ২০১২ সালে আমরা এটির কাজ শুরু করি। আমাদের একদম জিরো থেকে শুরু করতে হয়েছে। আমেরিকা এবং শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন ফ্যাক্টরি কীভাবে গ্রিন হচ্ছে সে সব স্টাডি করতে হয়েছে আমাদের। খুব স্ট্রাগল করে আমাদের গ্রিন বিষয়টি জানতে হয়েছে। তখন আমাদের একটাই চিন্তা ছিল, আমরা গ্রিন মাত্র শুনছি, চারদিকে গ্রিন মাত্র হচ্ছে বা হবে, বা সবাই চেষ্টা করছে। তখন আমাদের একটাই ইচ্ছা ছিল, আমরা যা-ই করবো ভালো ফ্যাক্টরি করবো, যেটা আমাদের সমাজের ক্ষতি করবে না। সবার জন্য মঙ্গলের কারণ হয়। সেই থেকেই আমরা গ্রিন করবো একটা প্রতিজ্ঞা নেই। এতো দিন পরে আমরা যখন তিন নম্বর ফ্যাক্টরি শেষ করে চার নম্বর ফ্যাক্টরির শেষের দিকে, আমরা দেখি ভালোই রিটার্ন পাচ্ছি। আমরা ভালো কিছু করতে চাই। সেই থেকেই গ্রিনের যাত্রা শুরু। আমরা এখন একটা ভালো বেনিফিটও পাচ্ছি।
জাগো নিউজ: ১২ হাজার কর্মীকে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার দিচ্ছে আপনার প্রতিষ্ঠান। এতো বিশাল সংখ্যক মানুষের প্রতিদিনের খাবার নিশ্চিতের কঠিন কাজটি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?
এসএম খালেদ: আমরা সবসময় ভালো কিছুর সঙ্গে থাকতে চাই। আমরা চাই যেন আমাদের সবার মঙ্গল হয় এবং স্নোটেক্স পরিবারের সবাই যেন ভালো থাকে। আমাদের দ্বারা সমাজের যেন ক্ষতি না হয়। দেশের যেন ক্ষতি না হয়। সেই থেকেই আমাদের ২৫ বছর আগের যাত্রা শুরু। আমরা দেখলাম যদি আমরা কোনোভাবে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে তারা (শ্রমিক) একটু ভালো থাকতে পারবে। কারণ তাদের অনেকে সকাল বেলা খাবার নিয়ে আসে, দুপুরের মধ্যে অনেকের খাবার নষ্ট হয়ে যায়। অনেকের আবার অনেক দূর যেতে হয় খাবার খেতে, অনেকে খাবার আনতে পারে না বলে রেস্টুরেন্টে যায়। সেই থেকেই আমাদের চিন্তা আমরা রান্না শুরু করি। আমরা কিছুই জানতাম না কীভাবে এতো লোকের রান্না করব, কিন্তু আমরা শুধু ভাত, ডাল, ভেজিটেবল দিয়ে শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে আরেকটু প্রোটিন অ্যাড করি, আমরা আরেকটু ভালো করার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। ভবিষ্যতে আরও ভালো করব। সুতরাং ভালো কিছু থেকেই যাত্রা শুরু। সবকিছুতেই আমরা ভালো কিছু করতে চাই। খাবার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ভালো কিছু মনে হলেই আমরা প্ল্যানিং শুরু করি। অনেকে খাবার সাবকন্ট্রাক্ট দেয়, অনেকে বাইরে থেকে খাবার আনে। কিন্তু আমরা নিজেরাই ফ্রেশ সব কিছু কিনি এবং নিজেরাই রান্না করি, যেন এখানে কম দামে ভালো কিছু দেয়া যায়।
স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন শ্রমিকরা
জাগো নিউজ: স্নোটেক্সের দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা, এরপর লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘সারা’ শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
এসএম খালেদ: আমাদের যে বায়ার তাদেরও দেখি ২৫ বছর আগে তাদের ফ্যাক্টরি ছিল। এখনো কানাডায় অল্প কিছু সংখ্যক ফ্যাক্টরি চলতে পারে, কিন্তু কোনো এক সময় তাদেরও হাজার হাজার ফ্যাক্টরি ছিল। এখন থেকে ১৫ বছর আগে দেখি যে কোরিয়াও খুব ভালো পোশাক উৎপাদন করত, তাইওয়ানও করত। ইউরোপেও প্রচুর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল। সেগুলো কালের বিবর্তনে বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপের কোনো একটি এলাকায় হাজার হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল, ২০-৩০ বছর আগে তাদের ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। গার্মেন্টস ছাড়া যারা রিটেইল চালু করে তারা আজকে বায়ার এবং আমাদের আমেরিকান বায়ার যারা গার্মেন্টস প্রোডাকশন ছেড়ে রিটেইল চালু করে বা যারা ইম্পোর্ট চালু করে, তারাই আমাদের বায়ার। আমাদের দেশও ভালোভাবে যাচ্ছে, কোনো এক সময় ১০-১৫ বছর আগে আমাদের যেই মিনিমাম একটা স্যালারি ছিল সেটা আজ ১০ গুণ হয়েছে। আমাদের জীবনযাত্রার মান সামনের দিকে আরও ভালো হবে। আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর বিজনেসের দিকে যেতে হবে।
যখন স্নোটেক্সের নেগেটিভ গ্রোথ দেখব তখন আমরা রিটেইলে আরও বেশি পরিশ্রম দেব, যেন এটাকে আরও বড় পরিসরে নেয়া যায়, সেই থেকেই আমরা আমাদের ‘সারা’র যাত্রা শুরু করি। দু-তিন বছরের যাত্রায় আমরা ভালো করছি বলে মনে করি।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় ‘সারা’ লাইফস্টাইলের এমডি এসএম খালেদ
জাগো নিউজ: ‘সারা’ লাইফস্টাইল ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে, এখন এর আউটলেট শুধু ঢাকায়। শিগগিরই ঢাকার বাইরে আউটলেটের মাধ্যমে এর পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কি? একই সঙ্গে দেশীয় এই ব্র্যান্ডকে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে কি?
এসএম খালেদ: আমরা ঢাকার বাইরেও যাব। আমরা তো মাত্র রিটেইল শিখছি, আমরা এখনো নবীন এখানে। এখনো রিটেইলের অনেক কিছু জানি না। আমরা রিটেইলকে জানার চেষ্টা করছি, যেন সহজেই শপে যেতে পারি। সেজন্য আপাতত ঢাকার মধ্যেই থাকছি এবং প্রতিনিয়ত এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে রিটেইলকে ভালো করার চেষ্টা করছি। কাস্টমার সার্ভিস, গার্মেন্টস—সবকিছু আরও ভালো করার চেষ্টা করছি। তারপরও এ বছর স্বপ্নের প্রায় ২০-৩০টি শপে ‘সারা’র পোশাক বিক্রি করছি। আরও অনেক ব্র্যান্ড শপের মাধ্যমে আমরা ‘সারা’র পোশাক বিক্রি করছি। ‘সারা’র পোশাক এখন বগুড়া, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার বাইরেও এটি আমরা নিয়ে যাব। কোনো এক সময় দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।
জাগো নিউজ: বরাবরই স্বল্প বাজেটে মানসম্পন্ন পোশাকের জন্য ‘সারা’র প্রতি মানুষ আস্থাশীল। ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত রাখার বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
এসএম খালেদ: স্নোটেক্সের সাকসেসফুল গল্পের বড় কারণ কম দামে ভালো প্রোডাক্ট বায়ারদের দেয়া। এ চেষ্টা আমরা স্নোটেক্সে ২০-২৫ বছর ধরে করেছি এবং শিখেছি। সেটি আমরা ‘সারা’য় অব্যাহত রাখব। আমরা চাই এটা একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হোক, যেন কম দামে দেশের মানুষ ভালো কিছু কিনতে পারে। এটি প্রোফিট আর্নিং বিজনেস না হয়ে সেবামূলক হোক। সবসময় চেষ্টা করবো, ‘সারা’র মাধ্যমে কম দামে প্রোডাক্ট দেশ-বিদেশে দেয়ার জন্য।
স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড কারখানায় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান শ্রমিকরা
জাগো নিউজ: ‘সারা’কে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?
এসএম খালেদ: স্নোটেক্সের জার্নির তো একটা লিমিটেশন থাকবে। সব দেশেই গার্মেন্টস একটা পর্যায় পর্যন্ত চলে। আমাদের দেশে আগামী ২০-৩০ বছর পর্যন্ত হয়তো থাকবে। গত ৫-১০ বছরে দেশ যেভাবে আগাচ্ছে, সেভাবে আগাতে থাকলে স্নোটেক্সের এক্সপোর্টের পরিধি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসবে। কিন্তু রিটেইল কখনোই ছোট হবে না, রিটেইল প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে। প্রতিনিয়তই আমাদের দেশব্যাপী বাড়বে, দেশের বাইরে বাড়বে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যত বাড়বে, ততই আমাদের ‘সারা’ বাড়বে, তাতে সমস্যা হবে না। রিটেইল বায়ারদের জন্য স্নোটেক্সে কাজ করি, সেরকম একটা রিটেইলে গ্লোবাল শপ পর্যায়ে ‘সারা’ কাজ করতে পারবে বলে আশা করি।
জাগো নিউজ: যারা নতুন করে ব্যবসায় আসতে চান বা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের জন্য যদি কোনো পরামর্শ থাকে...
এসএম খালেদ: সবাই বিজনেস করতে পারবেন। যে যেটা চায় সেটাকে আসলে ঠিক করতে হবে যে, আমি আসলে কী বিজনেস করতে চাই? আমি যেটা করতে চাই, আমাকে মনপ্রাণ দিতে হবে। আমরা যদি দুটি গোল একসঙ্গে করে ফেলি তাহলে হবে না। চিন্তায় রাখি কী করতে চাই। তাহলে ধীরে ধীরে করতে পারব। আমরা এক্সেসরিজ সাপ্লাই করতাম, তখন কাস্টমার স্যাটিসফেকশনে আমাদের নজর ছিল, যেন আমাদের কাস্টমাররা বিরক্ত না হন। যখন বায়িং হাউজ শুরু করি, তখনো কাস্টমারদের হ্যাপি রাখার চেষ্টা করি। এখন ‘সারা’য়ও আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে কাস্টমার হ্যাপি রাখা। আমরা কী করতে চাই, সেদিকে মনোযোগী হলেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব, সেটিই একমাত্র গোল। ইনভেস্টমেন্ট ইম্পর্টেন্ট না, জানা ইম্পর্টেন্ট। ব্যবসা করতে হলে আগে একটু জানতে হয়, অনেকে না জেনে লোন করে ব্যবসা শুরু করে সমস্যায় পড়েন। অল্প অল্প করে ব্যবসা শুরু করতে হয়। ধীরে ধীরে প্রতি বছর একটু একটু করে অগ্রগতি করতে হয়। তাহলেই ব্যবসা করাটা কোনো বিষয় নয়। অনেস্টি এবং কমিটমেন্ট যদি ঠিক রাখা যায়, তাহলে বিজনেস করা কোনো বিষয় নয়।
আইএইচআর/এইচএ/জেআইএম