বছরজুড়ে নানা ঘটনায় আলোচনায় ছিল দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় সর্বত্রই ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে মহামারির বছরেও ৩০টি হত্যাকাণ্ড এবং ৮৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলাজুড়ে ৮৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাপের কামড়ে মৃত্যুও আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলাটিতে। বছরজুড়ে ঝিনাইদহে ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
Advertisement
করোনার বছরেও আলোচনায় খুন-ধর্ষণ
মহামারি করোনায় বিশ্বজুড়ে যখন আতঙ্ক, ঠিক সেসময়েও ঝিনাইদহে চাঞ্চল্যকর খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও স্থানীয় ক্লিনিক মালিক আজাদসহ চারজনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলা দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল। কোটচাঁদপুর থানায় স্বামী পরিত্যাক্তা এক নারী মামলটি দায়ের করেন।
৯ জানুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুরে ইউপি সদস্য স্বপন হোসেনকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি সদর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। মহেশপুরে সোহাগ হোসেন (২৩) নামের এক যুবকের বিশেষ অঙ্গ কেটে হত্যা করে তার স্ত্রী। এতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি পৌর শহরের নতুন হাটখোলায় গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। কালীগঞ্জ শহরে মাদরাসাছাত্র আলামিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারে গিয়ে হামলার শিকার হন পিবিআই এর ৫ সদস্য।
Advertisement
নারী ও শিশু পাচার
বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে উদ্বেগজনকহারে নারী ও শিশুপাচারের ঘটনা। বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় সীমান্ত অতিক্রম করার অভিযোগে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করে বিজিবি। এ ঘটনায় প্রায় শতাধিক মামলা হয়।
রূপকথার ‘গুপ্তধন’
পুরনো ঘরের মাটি কাটার সময়ে ২০০ বছর আগের মুদ্রা পাওয়া যায়। কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের দে পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার বাসিন্দারা সেখানে ছুটে যায়। গ্রামের কৃষক সুনিল দে এর বাড়িতে ২০০ বছরের একটি পুরাতন মাটির ঘর রয়েছে। ঘরের মেঝে খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া এসব মুদ্রায় গ্রেট ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়া ও রাজা সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের ছবি ছিল।
Advertisement
করোনার থাবা
করোনায় সারাদেশের মতো ঝিনাইদহে হানা দেয়। এ জেলায় ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ২৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ্য হয়েছেন ২ হাজার ১৬৪ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সবসময় গ্রিনজোনে ছিল ঝিনাইদহ।
ফুলের রাজ্যে করোনার থাবা
ফুলচাষে যশোরের পরই ঝিনাইদহের অবস্থান। করোনা ফুলের রাজ্যে হানা দিয়ে লন্ডভন্ড করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় ফুল বেচাকেনা। শত শত হেক্টর জমির ফুল গবাদিপশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করে চাষিরা। জেলার ছয় উপজেলায় ২০৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল।
সাপ আতঙ্ক
২০২০ সালে সাপের কামড়ে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে জেলার শৈলকুপাতে ১১ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন না থাকায় বেশিরভাগ সাপে কাটা রোগী মারা যায়। তবে বছরের শেষ দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়েছে।
আম্পানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে জেলার ২ লাখ ২৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মে মাসের শেষ দিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড়ে বহু বসতবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়ে। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়। মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যায়। ঝড়ে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কলার ক্ষেত নষ্ট হয়। এছাড়া ধান, পান, শাক সবজি, লিচু ও আম এবং ঘরবাড়িসহ প্রায় ৮৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এএএইচ/এমকেএইচ