তাহাজ্জুদ ফজিলতপূর্ণ নামাজ। নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের জন্য বিনা হিসেবে জান্নাতের ঘোষণা রয়েছে। যারা তাহাজ্জুদ নামাজে কুরআনুল কারিম থেকে ১০ আয়াত তেলাওয়াত করেন, তাদের জন্য বিষেশ পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। কী সেই পুরষ্কার?
Advertisement
ইসলামের প্রথম যুগে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন। কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াতে এ নামাজ পড়ার ব্যাপারে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজে কুরআনের ১০ আয়াত তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে-হজরত ফুযালা ইবনু উবাইদ এবং তামিমুদ্দারি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামাজে দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে তার জন্য এক কিন্তার সওয়াব রয়েছে।আর এক কিন্তার সওয়াব হলো- ‘পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।কেয়ামতের দিন তোমার রব বলবে- কুরআনের প্রতিটি আয়াতের বদলে এক স্তর উপরে ওঠো। এভাবে সর্বশেষ আয়াত তেলাওয়াত করা পর্যন্ত (তাহাজ্জুদ গুজার ব্যক্তি) ওপরে উঠতে থাকবে।আল্লাহ তাআলা তাঁর (তাহাজ্জুদ গুজার) বান্দাকে বলবেন- আমার নেয়ামত গ্রহণ করার জন্য তোমার হাত উন্মোক্ত কর। বান্দা হাত উন্মোক্ত করে বলবে- ‘হে আমার রব! তুমি তোমার দান সম্পর্কে ভালোভাবে জানো, আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘এক হাতে স্থায়ী নেয়ামতসমূহ গ্রহণ কর আর অপর হাতে অন্যান্য নেয়ামতসমূহ গ্রহণ কর।’ (মুজামুল কাবির)
মেরাজের আগে শেষ রাতে এ নামাজ পড়ার বিশেষ নির্দেশ ছিল। মেরাজের পর উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দেন। আর তাহাজ্জুদ নামাজ উম্মতের জন্য নফল নামাজ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ পড়ার নির্দেশ ছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘হে চাদর আবৃত, রাতের নামাজে দাঁড়াও কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-২)
Advertisement
ফরজ নামাজের পর মর্যাদার নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা সুস্পষ্ট। কেননা এ সময়টিতে মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বান্দার কথা শোনেন এবং প্রয়োজনীয় জিনিস দান করেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- ‘আফদালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর ‘তাহাজ্জুদের নামাজ’ হলো সবচেয়ে উত্তম নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতেন। কেননা রাতের এ নামাজ পড়ার সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রয়োজন পূরণে প্রথম আসমানে চলে আসেন। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে (প্রথম আসমানে) নেমে আসেন। যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে। অতপর আল্লাহ ডাকতে থাকেন-- তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব।- কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা (চাহিদা মোতাবেক) দেব।- কে আচো ক্ষমাপ্রার্থী! আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে; আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (মুসলিম, মিশকাত)
শুধু তাই নয়যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে যেতে পারবেন, তাদের মধ্যে একশ্রেণির লোক তারা, যারা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে।
Advertisement
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। এ নামাজে ন্যূনতম ১০টি আয়াত তেলাওয়াত করা। হাদিসে ঘোষিথ ফজিলত ও পুরস্কার লাভ করা। বিনা হিসেবে জান্নাতের যাওয়ার চেষ্টা ও সাধনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সব কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস