তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউই স্পষ্ট করে কোন কথা বলেননি। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন, ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, অপর নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন- সবাই মাশরাফি বিন মর্তুজার দলে থাকা, না থাকার ইস্যুতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
Advertisement
মাশরাফি যত দিন খেলতে চায় খেলুক- কারও মুখেই এমন কথা শোনা যায়নি। বরং সবাই কুটনৈতিক ভাষায় কথা বলছেন। বিসিবি বিগ বস পাপন ও ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান আকরাম নির্বাচকদের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলেছেন, এটা নির্বাচকদের ব্যাপার, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচকরা বলছেন, মাশরাফির বিষয়ে কোচের মতামতটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার লক্ষ্য পরিকল্পনায় মাশরাফি আছে কি নেই?- এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
তবে যে যাই বলুক না কেন, এটা নিশ্চিত হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নেই মাশরাফি। কোচ যাকে নিয়ে ভাবছেন না, যাকে নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই, তাকে দলে রাখতে গিয়ে তাই খানিক দ্বিধায় নির্বাচকরাও। কেউ মুখে কোনরকম নেতিবাচক কথা না বললেও, বোঝাই যাচ্ছে, মাশরাফি ইস্যুতে রীতিমতো সংশয়ে মিনহাজুল আবেদিন ও হাবিবুল বাশার।
তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডের প্রাথমিক দলে মাশরাফিকে রাখা নিয়ে তাদেরও অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন, হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর ক্রিকেট অপারেশনস কমিটি প্রধান আকরাম খানের মতামত নিতে হচ্ছে।
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে মাশরাফির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনরকম মন্তব্য করা থেকে বিরত দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন ও হাবিবুল বাশার। তবে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাদের মনোভাবটা পরিষ্কার হয়েছে। কথা শুনে মনে হয়েছে, তারা হেডকোচের সঙ্গে একমত এবং মনে করেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় মাশরাফিকে রাখার সুযোগ নেই। কারণ, তার বয়সই ভবিষ্যতে বেশি সময়ের জন্য তাকে বিবেচনায় রাখার প্রধান অন্তরায়।
দুই নির্বাচকই মনে করেন মাশরাফির পক্ষে আর খুব বেশি দিন (ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর) ফিটনেস ধরে রেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে তারাও চাচ্ছেন, মাশরাফি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ‘গুড বাই’ জানান। তা হলে তাদের কাজও সহজ হয়। কথা বলে পরিষ্কার বোঝা গেছে, নির্বাচকরা মাশরাফির মুখ থেকে অবসরের ব্যাপারে অমন কিছুই শুনতে চান।
আচ্ছা মাশরাফি কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে কোন কথা বলেছেন? মঙ্গলবার সকালে জাগো নিউজের কাছ থেকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচক নান্নু জানান, নাহ! মাশরাফি তার অবসর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোন কথাই বলেনি। জানা গেছে, শুধু নির্বাচকদের সঙ্গে নয়, মাশরাফি বোর্ডের তেমন কারো সঙ্গেও কথা বলেননি।
আমি অমুক সিরিজ খেলে বা অতদিনের ভেতরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চাই- এমন কোন কথা মাশরাফির মুখে শোনা যায়নি। মিডিয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ‘গুড বাই’ জানানোর ঘোষণা না দিলেও মাশরাফি সাম্প্রতিক সময় তার অবসর নিয়ে বোর্ডের এক নীতি নির্ধারকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং অবসর সম্পর্কে নিজের ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
যেখানে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ব্যাপারটা মাশরাফি নিজের ওপরই রাখতে চান। বোর্ড তাকে বলে দেবে, অমুক সিরিজ বা অত দিনের মধ্যে অবসর নাও- এমন কথা শুনতে নারাজ নড়াইল এক্সপ্রেস।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সময় নিজের আন্তর্জাতিক অবসরের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালকের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেছেন মাশরাফি। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ঐ পরিচালক জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, অবসরের বিষয়ে মাশরাফির অবস্থান খুব পরিষ্কার। মাশরাফি তাকে বলেছেন, ‘আমি কবে কখন কোন সময় কার বিপক্ষে খেলে অবসর নেব? সেটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। বোর্ড কিংবা নির্বাচকদের নয়। এখন আমি যখন মনে করব, তখনই সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেব। আমাকে চাপিয়ে দেয়ার কিছু নেই।’
মাশরাফি সেই বোর্ড পরিচালককে আরও জানিয়েছেন, ‘আমি এখনও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি এবং ভাল পারফর্ম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও তাই। দলে থাকলে সর্বাত্মক চেষ্টা করব সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে। আর যদি কোচ ও নির্বাচকরা আমাকে দলে না রাখেন, তাহলে তো আর আমার বলার কিছু থাকবে না।’
এদিকে ভেতরের খবর, সেই পরিচালকের সঙ্গে মাশরাফির কথোপকথন নির্বাচকদের কানেও পৌঁছেছে। তাই নির্বাচকরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, কী করবেন তারা? তাই প্রধান নির্বাচক নান্নুর মুখে এমন কথা, ‘মাশরাফি ইস্যুটা আসলে শুধুই আমাদের হাতে না, বোর্ড সভাপতি পাপন ভাই ও হেড কোচের মতামতটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবার মতামত নিয়ে আজই (মঙ্গলবার) সব কিছু চূড়ান্ত করে ফেলব।’
জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রাথমিক ও মূল দলে থাকছেন মাশরাফি। তবে কত দিনের জন্য তাকে জাতীয় দলের বিবেচনায় আনা হবে? সেটাই দেখার।
এসএএস/জেআইএম