শীতকালে গিজার ও ওয়াটার হিটারের চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। এ বছর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে একটু বেশি চাহিদা বেড়েছে এ দুটি পণ্যের। করোনার সময় অন্যান্য পণ্যের বেচাকেনা কমলেও এ পণ্যগুলোর বাজার বেশ চাঙ্গা। নানা ধরনের ও দামের গিজার এবং ওয়াটার হিটার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এ দুটি পণ্যের বাজারের সিংহভাগই দখলে রেখেছে দেশি কোম্পানি ও ব্র্যান্ডগুলো।
Advertisement
রাজধানীর গুলিস্তান, স্টেডিয়াম মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বেশকিছু মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গিজারের বেচাকেনা বেশি। অনেকে কিনছেন আবার অনেকেই কেনার জন্য বাজার যাচাই-বাছাই করছেন। গিজার প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোও এ বছর তাদের পণ্যের পসরা বেশ বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে জমজমাটই বলা চলে এ পণ্যের বাজার।
গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে গিজার কেনার জন্য আসা আল আমিন বলেন, ‘করোনার ভয়ে প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে, রাতেও গোসল করছি। এ কারণে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গিজার প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের জন্যও এটি শীতের দিনের একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ। সারাদিনের কাজকর্ম অনেকটাই সহজ করে দেয় গরম পানি।’
বিক্রেতারা বলছেন, গিজারের বাজার দখল করে আছে দেশি কোম্পানিগুলো। চীন, ভারত, ইতালি ও মালয়েশিয়ার কিছু পণ্য বাজারে বিক্রি হলেও চড়া দামের কারণে সেগুলোতে ক্রেতাদের আগ্রহ কম। অন্যদিকে দেশি কোম্পানিগুলো তুলনামূলক কম দামে উন্নত প্রযুক্তির সব ধরনের গিজার বিক্রি করছে।
Advertisement
দেশে গিজারের চাহিদা কী পরিমাণ রয়েছে বা পণ্যটির বাজারের আকার কত বড় তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই কারও কাছেই। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার (বার্ষিক) প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ গতানুগতিক পণ্যের বাইরে শুধু শীতকালীন পণ্যের।
বিইএমএমএ আরও বলছে, দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কারখানা জড়িত। এর বেশিরভাগই বিইএমএমএ’র সদস্য নয়। মাত্র ৮০০ কারখানা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তবে এসব কারখানার মধ্যে কারা কোন ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে বা কী পরিমাণ উৎপাদন করছে সে তথ্যও নেই।
বিইএমএমএ সভাপতি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন সমস্যার পরেও এ ধরনের পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। বড় কিছু দেশি কোম্পানি এ পণ্যের বাজারে আধিপত্য করছে। যদিও দেশীয় উৎপাদকরা বাজারে চীনের নিম্নমানের পণ্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা ইনস্ট্যান্ট ও বৈদ্যুতিক গিজার কিনছেন বেশি। এর মধ্যে ইনস্ট্যান্ট গিজারগুলোতে বেশি সুবিধা রয়েছে। ঝটপট পানি গরম করতে এবং স্বল্প পরিসরে ব্যবহারের জন্য ইনস্ট্যান্ট গিজার এখন বেশি জনপ্রিয়। এছাড়া যারা ভাড়া বাসায় থাকেন তারাও এ ধরনের গিজার বেশি কিনছেন। কারণ ইনস্ট্যান্ট গিজার সহজেই বহন করা যায়।
Advertisement
তবে বেশি পরিমাণে গরম পানি পেতে বৈদ্যুতিক গিজারের বিকল্প নেই। পরিবারের সদস্য সংখ্যার অনুপাতে ছোট-বড় বৈদ্যুতিক গিজার কিনছেন অনেকেই।
দামবাজার ঘুরে দেখা যায়, আকার ও মানের ওপর নির্ভর করে ইনস্ট্যান্ট ও বৈদ্যুতিক গিজারের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। ৩ থেকে ৯০ লিটার পর্যন্ত গিজার পাওয়া যায় বাজারে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গিজারের দাম পড়বে সাড়ে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত । ইনস্ট্যান্ট গিজারের দাম ২ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
কম দামে ওয়াটার হিটারগিজার কেনার সামর্থ্য যাদের নেই তাদের জন্য রয়েছে ওয়াটার হিটার। পানি গরম করার জন্য বাজারে ছোট-বড় নানান রকম ওয়াটার হিটার পাওয়া যায়। এসব ওয়াটার হিটারে ১ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত পানি গরম করা যায়। সাধারণত ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে এসব বিক্রি হয়।
এসেছে নতুন প্রযুক্তির গিজারগ্রাহক তার পছন্দ অনুযায়ী তাপমাত্রা সেট করে নিতে পারবে, এমন উন্নত প্রযুক্তির গিজারও আছে বাজারে। কপার হিটিং এলিমেন্ট ব্যবহার করায় এসব গিজারে দ্রুত পানি গরম হয়। এছাড়া বাজারে রিমোট কন্ট্রোল গিজারসহ নতুন মডেলের গিজার নিয়ে এসেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড আরএফএল। রিমোট কন্ট্রোলড এসব গিজারে রুমের যেকোনো স্থান থেকে গিজার চালু বা বন্ধ করা যাবে।
কোথায় পাবেনরাজধানীর ছোট-বড় প্রায় সব ইলেকট্রনিকস মার্কেটেই গিজার বিক্রি হচ্ছে। তবে যাচাই-বাছাই করে গিজার কিনতে চাইলে নিউমার্কেট, গুলিস্তান, স্টেডিয়াম মার্কেট, নবাবপুর, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট সেরা। এছাড়া মিরপুর, মালিবাগ, গুলশান, বাড্ডা, ধানমন্ডি, হাতিরপুল, ফার্মগেটের বেশকিছু দোকানে গিজার ও ওয়াটার হিটার বিক্রি হয়। এর বাইরে দেশি ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব শোরুমেও এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
রয়েছে নিম্নমান ও নকল পণ্যের অভিযোগবাজারে অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের মতো গিজারের ক্ষেত্রেও ক্রেতাদের কিছু অভিযোগ রয়েছে। বেশি প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর নকল পণ্য রয়েছে বাজারে। এসব নকল পণ্য বাজারজাত করছে কয়েকটি চক্র।
মুস্তাফিজ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘চীন থেকে আনা নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে নামি দামি ব্র্যান্ডের নামে। বেশি লাভের কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকছেন এসব পণ্যের বিপণনে। ঠকছি শুধু আমরা ক্রেতারা।’
এনএইচ/এমএইচআর/এইচএ/জেআইএম