তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে হিট-নট-বার্ন বা ই-সিগারেট একটি নতুন অস্ত্র। সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলে ই-সিগারেটের প্রমোশন চালাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই বাংলাদেশে এখনই ই-সিগারেট বন্ধ করা জরুরি।
Advertisement
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা সেল- টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের যৌথ উদ্যোগে ‘ই-সিগারেট : স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং সভাপতি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।
বক্তারা বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনেই ই-সিগারেটকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদ্যমান অর্থ আইনে প্রদত্ত ই-সিগারেট আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া জরুরি। স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম রক্ষার স্বার্থে এ মুহূর্তে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের বিকল্প নেই।
Advertisement
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বলেন, ‘ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার কোনো উপায় হতে পারে না, বরং এটি নতুন আরেকটি নেশায় আসক্ত হওয়ার শুরু। ই-সিগারেট স্পষ্টভাবেই একটি ড্রাগ, যা আমাদের দেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।’
তিনি ই-সিগারেটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ এর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব তুলে ধরেন এবং আইনের ফাঁকফোকড় ব্যবহার করে বা যেভাবেই ই-সিগারেট আমদানি করা হচ্ছে তা নির্ণয় করে আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা থেকে দূরে রাখতে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন প্রাণ গোপাল দত্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে তামাক কোম্পানিগুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এছাড়া যারা ধূমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেটের প্রসার বন্ধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। আমি ইতোমধ্যে সংসদে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছি এবং আমরা সব সংসদ সদস্য মিলে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা থেকে তরুণদের রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, ‘ধূমপান মাদকের প্রবেশ দ্বার। আমাদের নতুন প্রজন্ম ই-সিগারেটের মতো ক্ষতিকর পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়ার আগেই আমাদের এর প্রসার রুখতে হবে। ই-সিগারেট কিভাবে আমদানি করা হচ্ছে তা নির্ণয় করে এখনই আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।’
Advertisement
ড. রুমানা হক বলেন, ‘তামাক কোম্পানি সবসময়ই বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে দেশের জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে ফেলে। বর্তমানে তারা দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে এবং তরুণদের এই নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে।’
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোনো আইন না থাকায় অহরহ যত্রতত্র ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রয় করা হচ্ছে অত্যন্ত সুলভমূল্যে। সিগারেট কোম্পানিগুলো ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর বলে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে। তবে ইতোমধ্যে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য ভারতসহ বিশ্বের ৪২টি দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। আমাদেরকেও অতিদ্রুত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।’
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি বলেন, ‘সিগারেট থেকে ই-সিগারেট নিরাপদ তা ভাবার কোনো কারণ নেই। মুনাফার জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকিতে ফেলছে তামাক কোম্পানিগুলো। তাই প্রচলিত তামাক পণ্যের মতো সহজলভ্য হবার আগেই ই-সিগারেটকে সমূলে নির্মূল করা উচিৎ।’
ওয়েবিনারে আরও কথা বলেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, স্কোপের কাজী এনায়েত হোসেন, আরডিসির আব্দুর রহমান, স্বাবলম্বীর কাজী হাফিজ, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের পক্ষে বেলাল হোসেন, আমিরুল ইসলাম লিন্টুসহ আরও অনেকে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীগণ জুম অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন।
পিডি/এআরএ/এমকেএইচ