টিনের চালার একটি ঘরের বারান্দায় শিকল পায়ে মাটিতে বসে আছে মুন্না। শরীরে শুধু একটি প্যান্ট। এক ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে মুন্না সবার বড়। তার বাবা মুনসুর আলী (৫৫) একজন গরু ব্যবসায়ী।
Advertisement
৭ বছর বয়সে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হলে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তার বয়স বর্তমানে ১৮ বছর। ১১ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে বারান্দার খুঁটির সঙ্গে।
মুন্নার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট (পাড়া) গ্রামে। সেখানে তার বাড়িতে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন মুন্না।
মুন্নার মা মনোয়ারা বেগম জানান, অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে সে এলাকাবাসীর বিভিন্ন লোকসান করে। কারো গরু ছাগল মারধর, মানুষকে মারধর, অনেকের সবজিখেত নষ্ট করে। এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনকেও কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করে। এজন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।
Advertisement
বর্তমানে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার বাবা মুনসুর আলী। তিনি বলেন, গরুর দালালির কাজ করি আমি। কাজ না থাকলে আমি দিনমজুরের কাজ করি। দৈনিক আয় হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাব না মুন্নার চিকিৎসা করাব ভেবে পাচ্ছি না।
‘তারপরও বিভিন্নভাবে তার চিকিৎসা করাচ্ছি। দৈনিক ১০০ টাকার ওষুধ লাগে মুন্নার। অবশিষ্ট টাকায় সংসারের খরচ চালাই। এভাবেই কষ্টের মধ্যে চলছে আমাদের জীবন। অর্থের অভাবে পুরোপুরিভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমি বাবা হয়ে আর ছেলের কষ্ট সইতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে আমাদের কোনো ভাতা দেয়া হচ্ছে না। সহযোগিতা পেলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে পারতাম। প্রতিবন্ধী মুন্নার চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা চান তিনি।
এ ব্যাপারে ১০ নম্বর জাবরহাট ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। মুন্নাকে চিকিৎসার জন্য পাবনা বা ঢাকার মানসিক হাসপাতালে নিতে তার বাবাকে সহযোগিতা করব। সেখানে গেলে হয়তো সে ভালো হতে পারে।
Advertisement
ঠাকুরগাঁও বিএমএর সভাপতি ডা. আবু মো. খায়রুল কবীর বলেন, মুন্না অপচিকিৎসার কারণে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। তাকে যে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে সেটি খুবই অমানবিক।
ঢাকায় মানসিক হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পেলে মুন্না সুস্থ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় তিনি মুন্নার চিকিৎসায় বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এমকেএইচ