ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যস্ত প্রচার-প্রচারণায়। পৌর এলাকার রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের তোরণ, পোস্টার আর ব্যানারে। দলীয় মনোনয়ন পেতে চালাচ্ছেন জোর লবিং। গণসংযোগ করে মাঠ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থানও শক্ত করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রচার-প্রচারণায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এগিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন লড়াই চলছে কয়েকদিন ধরে। কে কার চেয়ে বেশি লোক দিয়ে শোডাউন দিতে পারে তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সুলতানুল আজম আপেল শহরে প্রথম শোডাউন করেন। এর তিন দিন পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যাপক শো-ডাউন দিয়েছেন জেলা শ্রমীক লীগ সভাপতি ও পরিবহন নেতা মো. বাবুল সরকার। শোডাউন দিয়েছেন বর্তমান মেয়র মো. রমজান আলীও। একই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্য প্রার্থীরাও শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।তবে ক্ষমতাসীন দল শোডাউনের মহড়া দিলেও অনেকটা নিরবেই গণসংযোগ করছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যাবে কিনা তার স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় অনেক প্রার্থীই চরম হতাশায় দিন পার করছেন।মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাড. আজাদ হোসেন খান জাগো নিউজকে জানান, পৌর নির্বাচনের বিষয়ে দল দ্রুত সিদ্ধান্ত দিলে প্রচারণার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা হতো। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যেভাবে অবাধে প্রচারণা চালাতে পারছেন, সেভাবে তারা পারছেন না। প্রচারণার শুরুতেই তাকে পুরাতন দুটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিলো।একই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী রায়হান উদ্দিন টুকু জাগো নিউজকে জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ব্যাপক শোডাউন করলেও, তারা অনেকটা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নয়তো শুরুতেই দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হয়রানি করতে পারে।নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপেই মানিকগঞ্জ ও সিংগাইর পৌরসভায় নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। মানিকগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও, সিংগাইর পৌরসভা দ্বিতীয় শ্রেণির। পৌরবাসীর অভিযোগ দুটি পৌরসভাতেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। মানিকগঞ্জ পৌরসভায় অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট, বহুতল ভবন, মার্কেট ,পানি, গ্যাস, বিদ্যু, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন হলেও, সংকটের সমাধান হয়নি। নতুন প্রার্থীরা এসব সংকটকে পুঁজি করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সমস্যা সমাধানের।মানিকগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন চারজন। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র মো. রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল হুদা সেলিম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক সুলতানুল আজম আপেল এবং জেলা শ্রমীক লীগ সভাপতি ও পরিবহন নেতা মো. বাবুল সরকার। তবে দল থেকে সবুজ সংকেত না পেলে গাজী কামরুল হুদা সেলিমের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন তিনজন। এরা হচ্ছেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাড, আজাদ হোসেন খান, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ যাদু, সাবেক ছাত্র নেতা রায়হান উদ্দিন টুকু।সিংগাইর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন দুইজন। এরা হলেন, সাবেক মেয়র মীর মো. শাজাহান ও যুবলীগ নেতা আবু নঈম মো. বাসার। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীও দুইজন। এরা হলেন, বর্তমান মেয়র অ্যাড. খোরশেদ আলম ভূইয়া জয় ও উপজেলা যুবদল নেতা খান মোহাম্মদ রুমি। বিএনপি-আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালালেও অন্য কোনো দলের প্রার্থী মাঠে দেখা যাচ্ছে না।ক্ষমতাসীন দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাড. গোলাম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে মাঠের অবস্থা যাচাই-বাছাই করেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দুটি পৌরসভাতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।এদিকে, সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে গণসংযোগ করলেও নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে এখনও বিএনপি থেকে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে তৃণমূল।এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ এস জিন্নাহ কবীর জাগো নিউজকে জানান, নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে মনোনয়নের কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্তা নেই। তাই বিএনপিকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণ মুখিয়ে রয়েছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে দুটি পৌরসভাতেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবে বলেও জানান তিনি।বি এম খোরশেদ/এআরএ/এমএস
Advertisement