ক্যাম্পাস

হল প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের একই খাতে বছরে তিনবার ফি বৃদ্ধি, সব সম্প্রদায়ের ছাত্রদের বসবাসের জন্য সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া, কোনো ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গভীর রাতে হলের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, একশ টাকা নিয়ে হলে অতিথি রাখাসহ নানা অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নির্মিত এ হলটি। সর্বশেষ গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে হল প্রশাসন বিভিন্ন খাত দেখিয়ে হলের আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড নবায়ন করতে ৩ হাজার ৬শ` টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দেয়। এই টাকা আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার সময়ও বেধে দেয় হল প্রশাসন। যদি কোনো শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করতে না পারেন তাহলে তিনি হলে থাকতে আগ্রহী নয় বলে বিবেচিত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যে সকল ছাত্রের হলে পরিচয়পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হচ্ছে তাদের হলের ফি বাবদ ৩ হাজার ৬শ` টাকা আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করে পরবর্তী এক বছরের জন্য আইডিকার্ড নবায়ন করার নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। যে সকল ছাত্র নির্দিষ্ট সময়ে হলের টাকা পরিশোধ করে আইডিকার্ড নবায়ন করবে না, তারা হলে আর থাকতে আগ্রহী নয় বলে ধরে নেয়া হবে। তাদের সিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।’ বিজ্ঞপ্তিটির সঙ্গে ৩ হাজার ৬শ` টাকা খরচের খাতও ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সাতটি খাতওয়ারি টাকার হিসাবও দেয়া হয়। সে হিসেবে, ছাত্রকল্যাণ তহবিল ৫শ` টাকা, হল ভর্তি ফি ১শ` টাকা, হল পরিচয়পত্র ফি ১শ` টাকা, দরিদ্র তহবিল ২শ` টাকাসহ শিক্ষা (খেলাধুলা, বির্তক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি) ৭শ` টাকা, আবাসিক ছাত্র ফি (জামানত ও সংস্থাপন) ১ হাজার ৫শ` টাকা এবং বিবিধ ৫শ` টাকা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য হলগুলোর চেয়ে এই হলে টাকার পরিমাণ অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোতে বাৎসরিক ফি বাবদ নেয়া হয় মাত্র ৩৬০ টাকা। কোনো কোনো হলে এর পরিমাণ ১৮০ টাকা মাত্র। বিজয় একাত্তর হলের আবসিক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মানসুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ভর্তি ফি ১শ` টাকা। কিন্তু আমরাতো আর প্রতি বছর হলে ভর্তি হচ্ছি না। তাহলে এ টাকা কেন? দ্বিতীয়ত জামানত ও সংস্থাপন ফি ১ হাজার ৫শ` টাকা নেয়া হচ্ছে। যা আমরা গত বছর দিয়েছি। তাহলে প্রতি বছর কেন নেয়া হবে জামানত ফি? তৃতীয়ত দরিদ্র তহবিল বাবদ ৫শ` টাকা নেয়া হচ্ছে যার কোন কার্যক্রমই আমাদের চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, সহ শিক্ষা বাবধ নেয়া হচ্ছে ৭শ` টাকা। যেখানে খেলাধুলা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরণের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গত বছর পালন করা হয়নি। তাহলে এত টাকা কেন।’ এদিকে, হল প্রশাসনের এমন অতিরিক্ত ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার হলে পোস্টারিং করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাম সংগঠনগুলোকে নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এর সুরাহ চায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই দুই একদিনের মধ্যে কঠোর আন্দোলনেও যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী।এছাড়াও গত ১৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চলতি সেশন থেকে এ হলে ভিন্ন ধর্মীদের থাকার বৈধতা দেয়া হয়। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে হলের বর্তমান আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা এর জোরালো প্রতিবাদও করে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। অথচ হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল শুধু মুসলিম ছেলেদের জন্য। এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, হল প্রভোস্ট নিজেকে অতি অসাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত করতে গিয়ে সিন্ডিকেট সভায় এটি পাস করিয়েছেন। নতুবা এমন করতে যাবেন কেন তিনি। আর প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে হলটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধারও সম্ভবনা থেকে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপকে হিন্দু-মুসলিম কোনো ছাত্রই ভালোভাবে দেখছেন না। কারণ এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নয় দাঙ্গারই সম্ভবনা বেশি থাকে।’সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফি এর বিষয়টি আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল কর্তৃপক্ষ মিলে এই ফি নির্ধারণ করেছে। হলে ওঠার সময়সহ প্রতি বছর এ ফি (৩,৬০০) টাকা দেয়া লাগবে যা আগেই নির্ধারণ করা ছিল। তবে তল্লাশির বিষয়ে তিনি বলেন, হলের বিভিন্ন রুমে নানা ধরণের অপকর্ম চলতে পারে এবং হলে বহিরাগত থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তল্লাশি চালানো হয়। যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক মঙ্গলের জন্যই করা হয়ে থাকে।  এমএইচ/এসকেডি/একে/এমএস

Advertisement