জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদের আর নেই। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
Advertisement
তাকে হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন তার অনেক সহকর্মী। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন লুৎফর রহমান জর্জ। নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক নাটক কোথাও কেউ নেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছিল। সে নাটকের প্রধান চরিত্র বাকের ভাইয়ের দুই সহযোগীর অন্যতম ছিল বদি ও মজনু। আদালতে বাকের ভাইয়ের বিপক্ষে সাক্ষী দিয়ে বদি যেমন সবার চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিল, তেমনি বাকের ভাইয়ের সাথে থেকে যাওয়া মজনু পেয়েছিল ভালোবাসা।
বদি চরিত্রের আবদুল কাদের আজ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার স্মরণে আজ কাঁদছেন মজনু চরিত্রের অভিনেতা লুৎফর রহমান জর্জ। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কাদের ভাই প্রথমত আমার সিনিয়র ভাই। আমি তাকে ৩৫ বছর ধরে চিনি। থিয়েটারে কাজ করতে গিয়ে পরিচয়। পরে যখন টিভিতে গেলাম, আমার প্রথম টেলিভিশন নাটকেও তিনি আমার সঙ্গে ছিলেন। তাকে নিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। কাদের ভাইয়ের মতো মানুষ যেখানে থাকেন সেখানে সকাল-সন্ধ্যা আনন্দ খেলা করে। তার সঙ্গে থাকলেই হেসে খেলে দিন চলে যেত।
বড় ভাই, ছোট ভাই তো ছিলামই আমরা। বন্ধুত্বও ছিল আমাদের। তার মধ্যে বড় ভাই সুলভ আচরণ দেখতাম না কখনো। মিশতেন মন খুলে। আগলে রাখতেন দায়িত্ব নিয়ে। আমার ক্যারিয়ার শুরুর দিনগুলোতে কাদের ভাই অনেক কিছু শিখিয়েছেন। যখন যেখানে দেখা হতো আগেই কথা বলতেন।’
Advertisement
হঠাৎ নীরবতা। ওপাশে কান্নার আওয়াজ। নিজেকে সামলে নিয়ে জর্জ বললেন, ‘কান্না পাচ্ছে খুব, তার মতো মানুষ এত কষ্ট পেয়ে গেলেন শেষ দিনগুলোতে। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। আমরা একটি নাটকে অভিনয় করে আজীবন সেই নাটকের চরিত্র হয়ে রইলাম। বাকের ভাই, বদি আর মজনু। দুজন রইলাম। বদি চলে গেলেন। একটা আবেগের শূন্যতা এখানে ভর করেছে।’
সেই বিখ্যাত ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে আব্দুল কাদেরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা জানিয়ে জর্জ বলেন, ‘কাদের ভাই ওই নাটকের জনপ্রিয়তা খুব উপভোগ করেছেন। আমরা সবাই করেছি। নাটকটি এত দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পর চরিত্রগুলো সব মানুষের মুখে মুখে চলে এলো। দারুণ উত্তেজনা নিয়ে, মনোযোগ নিয়ে কাজ করেছি। বাকের ভাই ও মজনুর নামে মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল বদি। সে বদি চরিত্রে অভিনয় করে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি কাদের ভাইকে। তবে সবই মজার অভিজ্ঞতা হিসেবে উপভোগ করেছেন তিনি। সহজ-সাদামাটা মানুষ ছিলেন।
মনে আছে নাটকটি শেষ পর্বে হঠাৎ করে দেখি কাদের ভাইয়ের দাড়ি বড়। আগের দৃশ্যে দাড়ি আরও কম ছিল। পরের দৃশ্যে দাড়ি বড়। আমি বললাম আপনার দাড়ি বোধহয় বড় হয়ে গেছে। দেখেন তো। উনি ফিসফিস করে বললেন, ‘জর্জ প্লিজ আর আলাপ করো না এ নিয়ে। যদি এটা এখন কাউকে বলো তাহলে আমার মাইর একটাও বাইরে পড়বে না। সিনটা শেষ করতে দাও দাড়ি রেখে’ এমনই মজার মানুষ ছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কাদের ভাইয়ের সঙ্গে অনেক নাটক করেছি। ২০-৩০টারও বেশি। ভাবিও ছিলেন অনেক নাটকে। সম্পর্কে উনি আমার বেয়াই হন। আমার খালাতো ভাইয়ের স্ত্রীর খালাতো ভাই ছিলেন কাদের ভাই। তাকে নিয়ে আমার স্মৃতির শেষ নেই।’
Advertisement
এদিকে অভিনেতার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জেমি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন, আজ শনিবার বাদ মাগরিব রাজধানীর বনানীতে সমাহিত করা হবে তাকে। তার আগে রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন আব্দুল কাদেরকে।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের চরিত্র ‘বদি’ খ্যাত আব্দুল কাদেরের জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। তার বাবা মরহুম আবদুল জলিল। মা মরহুমা আনোয়ারা খাতুন। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদেরের সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। রেখে গেছেন অসংখ্য গুণগ্রাহী ও বন্ধু স্বজন।
এলএ/এমএস