সাজেদুর আবেদীন শান্ত
Advertisement
সৈয়দা তাসমিয়াহ তাহলীলের জন্ম সিলেটের পশ্চিম জাফলংয়ের গোয়াইনঘাটের রাজনগর গ্রামে। বয়স মাত্র তেরো বছর। এ বয়সে খেলাধুলা, আনন্দ-স্ফূর্তি করে দিন কাটানোর কথা। কিন্তু তাহলীল তা না করে পড়াশোনার পাশাপাশি হয়েছেন উদ্যোক্তা।
তাহলীল সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। বাবা আহমেদ মোস্তাকিন ব্যবসায়ী, মা চৌধুরী ডালিয়া হাসনীন শিক্ষক। তাহলীলের শখ বইপড়া, ছবি আঁকা ও অ্যানিমেশন তৈরি করা। এ বয়সেই ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর ঝোঁক আছে তার।
তাহলীল কেন উদ্যোক্তা হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্রতিটি মানুষই আলাদা। তাদের ক্ষেত্রগুলোও আলাদা। যদিও সফল হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সবার মাঝেই আছে। আমারও আছে। বর্তমানে ই-কমার্স যে অবস্থানে; তা থেকে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে সব কিছুই ই-কমার্স নির্ভর হবে। তাই আমার মনে হয়, উদ্যোক্তা হতে পারলে সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারবো।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘অনেক ভেবে-চিন্তে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান উই গ্রুপ ও রাজীব আহমেদের। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত নিজের দক্ষতা বাড়ানো, পরিচিতি এবং উদ্যোগকে সবার সামনে নিয়ে আসা। এ ছাড়া রুচিশীলতা, শৌখিনতা এবং প্রজন্মের কাছে পরিবেশ বান্ধব ও দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটানো।’
তাহলীল আরও বলেন, ‘উদ্যোগ আর ব্যবসা এক নয়। উদ্যোগে ব্যক্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সৃজনশীলতা থাকে। যা ব্যবসায় থাকে না। মুনাফা লাভ উদ্যোগের মূল বিষয় নয়। আমার উদ্যোগ আমার স্বপ্ন। আমি স্বপ্নের হাত ধরে হাঁটতে চাই। দেশি পণ্যের প্রচারণা ও বিশ্বের বুকে সিলেটকে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। সে জন্য মা-বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।’
পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা আমার খুব পছন্দ। এ ক্ষেত্রে শুধু গল্প, উপন্যাস নয়; যেকোনো জ্ঞানমূলক বই পড়তে পছন্দ করি। সব বিষয়ে পড়তে আমার ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে কল্পনা করি এবং কিভাবে তারা সেই সিচুয়েশন সার্ভাইভ করে, সেটা বোঝার চেষ্টা করি। দৈনন্দিন ঘটনা, কল্পনা, থ্রিলার, কমেডি, রহস্যের প্রতিও আমার আগ্রহ আছে।’
তাহলীল বলেন, ‘আমার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে, যেমন- বিভিন্ন নতুন শব্দ, শব্দের অর্থ, সেগুলোর বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, বাক্য, প্রবাদ-প্রবচন, উদ্ধৃতি লিখে রাখি। অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছু করেন। যেমন- ছবি আঁকা, নাচ, গান বা আবৃত্তিচর্চা। আমি এগুলো না করে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে হাঁটছি। পড়াশোনার পাশাপাশি দিনে তিন ঘণ্টা সময় দেই উদ্যোগে। তাই পড়াশোনার ক্ষতি হয় না।’
Advertisement
কাজের ধরন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিন্তা-চেতনায় আধুনিক ও প্রগতিশীল হলেও নিজের দেশের সংস্কৃতি ও প্রথাকে প্রচণ্ড গুরুত্ব দেই। যার জন্যই সিলেটের হারানো লিপি ‘নাগরী লিপি’র প্রতি মমত্ববোধ থেকেই উদ্যোগের নাম ‘নাগরী হাট’ রাখি। নাগরী হাট ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেতপণ্য নিয়ে কাজ করি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত নাগরী হাট পেজের মাধ্যমে বেতপণ্য বিক্রি করেছি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আমি মূলত অনলাইনে সময় দেই। আর পণ্য সংগ্রহ ও ডেলিভেরিতে আমার বাবা-মা সহায়তা করে। আমার ইচ্ছা, সিলেটের বেতপণ্যকে কাস্টমাইজ করে আধুনিক রূপ দিয়ে বিশ্বদরবারে তুলে ধরা।’
লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এমএস