সালতামামি

ধোনির অবসর ও বিশ্ব ক্রিকেটে করোনার ধাক্কা

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে এলো বছর। করোনার কারণে ২০২০ সালটা ‘বিষময়’ হয়ে উঠেছিল অনেক ক্ষেত্রই। করোনার ধাক্কায় অন্য সব জায়গার মতো পর্যদুস্ত ছিল বিশ্ব ক্রিকেটও। বছরজুড়ে ঠাসা সূচি থাকলেও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের আকস্মিক প্রাদুর্ভাবে তার বেশিরভাগই মাঠে গড়াতে পারেনি।

Advertisement

এ বছর ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বড় আসর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ছিল এশিয়া কাপও। কোনোটিই করোনার কারণে শেষতক আলোর মুখ দেখেনি। বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ।

২০১৯ সালের শেষদিকে করোনার সংক্রমণ শুরু হলেও ২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠিকভাবেই চলছিল ক্রিকেট। সেসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত ছিল ছয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এছাড়া চলছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও।

Advertisement

মার্চে এসে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশগুলো ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। ফলে বন্ধ হতে থাকে খেলাধুলা, স্থগিত বা বাতিলের খাতায় চলে যায় আন্তর্জাতিক অনেকগুলো ক্রিকেট সিরিজ।

তবে মে মাসে আলোর দেখা মেলে কিছুটা। বিশেষ ব্যবস্থায় ইংল্যান্ড সফরে যেতে সবুজ সংকেত পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন আনে আইসিসিও। ১১৭ দিন বন্ধ থাকার পর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ইংল্যান্ডের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট সিরিজ দিয়ে ফের মাঠে গড়ায় ক্রিকেট।

সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের আয়োজন করার কথা ছিল এশিয়া কাপ। তার পরের মাসে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। করোনা পরিস্থিতিতে খালি মাঠে এ দুটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে লোকসান গুনতে চায়নি কোনো পক্ষই।

মার্চের দিকে আইপিএল স্থগিত হয়েছিল। আইপিএলের বাণিজ্যিক শক্তি ফাঁকা সময়টা নিয়ে নিতে পেরেছে সহজেই। সেপ্টেম্বরে খালি মাঠে আয়োজন হয় আইপিএল। এরপর থেকে করোনাকে সঙ্গী বানিয়েই মাঠে চলেছে ক্রিকেট।

Advertisement

করোনা পরবর্তী ক্রিকেটে ব্যক্তিগত বেশ কিছু মাইলফলক দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ইংল্যান্ডের দুই ফাস্ট বোলার জেমস অ্যান্ডারসন টেস্টে ৬০০ আর স্টুয়ার্ট ব্রড ৫০০ উইকেটের ক্লাবে ঢুকেছেন এ বছরই।

এই বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দেন ভারতের কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১৫ আগস্ট তার অবসর ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই সবাইকে অবাক করে দিয়ে সতীর্থের পথ ধরেন সুরেশ রায়নাও।

‘বিষময়’ বছরটি কেড়ে নিয়েছে বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লিউ’ এর একজন- স্যার এভারটন উইকস ও অজি ক্রিকেট কিংবদন্তি ও জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ডিন জোন্স।

এছাড়া ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে সরব ছিল ক্রিকেট বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাঁটুর চাপায় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর থেকে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্ব। ম্যাচের আগে হাঁটু গেড়ে এই আন্দোলনের প্রতি ক্রিকেটারদের সংহতি জানানো ছিল নিয়মিত চিত্র।

সব মিলিয়ে ক্রিকেটের জন্য অন্যরকম একটি বছর কেটেছে। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষতে গেলে না পাওয়ার ভাগই হয়তো বেশি হবে। তবে কথায় আছে, দুঃখের পরই আসে সুখ। ২০২১ সাল আশার বছর হয়ে আগের বছরের সব আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেবে, সেই প্রত্যাশাতেই দিন গুনছেন সবাই।

এমএমআর/জেআইএম