দেশজুড়ে

ছেলের নির্যাতনে ঘরছাড়া মা-বাবা

রংপুরের পীরগাছায় মাদক কারবারি ছেলের নির্যাতনে পাঁচ মাস ধরে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য কাজী আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

Advertisement

গত ২৪ জুলাই থেকে অসহায় এ দম্পতি নিজ বাড়িতে যেতে পারছেন না। ছেলে মামুনুর ইসলাম শান্তর (২৭) বিরুদ্ধে পীরগাছা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি এবং আদালতে বাবার দায়ের করা সি আর মামলায় ওয়ারেন্ট থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না। ফলে অসহায় বাবা-মা প্রতিকার চেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

জানা গেছে, উপজেলার মকরমপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য কাজী আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তারের দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে প্রবাসী। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে মামুনুর ইসলাম শান্তকে নিয়ে চলছিল তাদের সংসার। গত দুই বছর থেকে শান্ত অসামাজিক কার্যকালাপে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া একের পর এক বিয়ে ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন শান্ত। এ নিয়ে বাবা কাজী আব্দুস সাত্তার ও মা রোকেয়া বেগম প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বাবা-মাকে নির্যাতন করে বাড়িতে গড়েন মাদকের আঁখড়া।

গত ১৬ মে বৃদ্ধ বাবা-মাকে হাত-পা বেঁধে বদ্ধ ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়ে মারার চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর পুলিশে খবর দিয়ে তাদের উদ্ধার করে। কিছুদিন পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে ৪৭ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। ওই মামলায় জামিনে ছাড়া পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন শান্ত। বাবা-মার উপর শুরু করেন অমানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে গত ২৪ জুলাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে কৌশলে পালিয়ে যান তারা।

Advertisement

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় আদালতে ছেলে বিরুদ্ধে মামলা করেন আব্দুস সাত্তার। পরে মাদক ও বাবার করা মামলায় শান্তর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে দীর্ঘ পাঁচমাস ধরে মাদক কারবারি ছেলের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

মকরমপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শান্ত সারাদিন এলাকাতেই থাকেন। সে এখনো মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

শান্তর মা রোকেয়া বেগম বলেন, এমন ছেলে পেটে ধরেছিলাম যে, তার হাতে মারপিট খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সে ছেলে নামের কলঙ্ক। বাবা কাজী আব্দুস সাত্তার বলেন, বৃদ্ধ বয়সে আমরা অন্যের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। ছেলে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে মেরে ফেলার। বাড়ির জমি, গাছপালা, গরু বিক্রি করে সে মাদকের ব্যবসা করছে। আমরা তার বিচার চাই।

Advertisement

তবে এ বিষয়ে জানতে মামুনুর ইসলাম শান্তর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এএইচ/জেআইএম