করোনাভাইরাসের নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ( বেবিচক) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন নিষেধ করা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে প্রতিদিন গড়ে প্রায় একশজন করে যাত্রী সনদ ছাড়াই দেশে ফিরেছেন।
Advertisement
গত ২০ দিনে (৫ থেকে ২৪ ডিসেম্বর) বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে মোট ৭৪ হাজার ২১৫ জন পরিবহন করে। তাদের মধ্যে এক হাজার ৯৯০ জন, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৯৯ জন যাত্রী করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া দেশে ফেরেন। সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ একাধিক বিমান সংস্থাকে জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীদেরও জরিমানা করা হয়।
করোনাভাইরাসের সনদ ছাড়া আগতদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ থেকে ফেরেন। যারা সনদ নিয়ে আসেননি তাদের সবাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি ও আশকোনা হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন দেশের ২৪টি ফ্লাইটে তিন হাজার ৩৮ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে ইস্তানবুল থেকে তুরস্ক এয়ালাইন্সের (টিকে-৭১২) আগত যাত্রীদের তিনজন এবং লন্ডন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি-২০২) দুজন যাত্রী সনদ ছাড়া আসেন। তাদেরকে উত্তরার দিয়াবাড়ির প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা মহড়ায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে বলেন, করোনা সনদ ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও প্রতিদিনই করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আসা অব্যাহত রয়েছে। বার বার সতর্কতা ও আর্থিক জরিমানাতে শতভাগ সফলতা আসছে না।
বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, আগের তুলনায় করোনা সনদ ছাড়া যাত্রীর সংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। সনদ ছাড়া যাত্রী এলে স্বাস্থ্য বিভাগের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত ২০ দিনে আন্তর্জাতিক রুটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৭৪ হাজার ২১৫ জন (৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত)। এ সময়ে বিভিন্ন ফ্লাইটে আগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে- তিন হাজার ৮৭৩ জন (৩০৪ জন কোয়োরেন্টাইনে), দুই হাজার ৯৫৭ জন (কোয়োরেন্টাইনে ১৯৫ জন), তিন হাজার ২২৩ জন (কোয়োরেন্টাইনে ২৩৫ জন) তিন হাজার ৫ জন (কোয়োরেন্টাইনে ৮০ জন), তিন হাজার ৫১৯ জন (কোয়োরেন্টাইনে ৪৮ জন), পাঁচ হাজার ৭৩৬ জন (কোয়োরেন্টাইনে ১১৮ জন), তিন হাজার ৮৪৭ জন (কোয়োরেন্টাইনে ৩০ জন), চার হাজার ১৩৫ জন (কোয়োরেন্টাইনে ২৩ জন), তিন হাজার ৮৮১ জন (কোয়োরেন্টাইনে ৪ জন), চার হাজার ৫০ জন (কোয়োরেন্টাইনে ২৬৫ জন), চার হাজার ২৭৯ জন (কোয়োরেন্টাইনে একজন), চার হাজার ৩৭৩ জন (কোয়োরেন্টাইনে ৪১৬ জন), চার হাজার ৪৭৮ জন (কোয়ারেন্টাইনে নেই), তিন হাজার ৫২ জন (কোয়ারেন্টাইনে একজন), তিন হাজার ২৮৪ (কোয়ারেন্টাইনে চারজন), দুই হাজার ৮২৬ জন (কোয়ারেন্টাইনে ১৫৫ জন), দুই হাজার ৪১৮ জন (কোয়ারেন্টাইনে দুজন) এবং তিন হাজার ৪৩ জন (কোয়ারেন্টাইনে পাঁচজন)।
করোনার আরটি পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া কিংবা করোনা পজিটিভ যাত্রী নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন কারণে যেসব এয়ারলাইন্সকে জরিমানা করা হয়, তাদের মধ্যে মালদিভিয়ান এয়াইলাইন্সকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, এয়ার এশিয়াকে এক লাখ টাকা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ৩০ হাজার টাকা, সৌদি এয়ারলাইন্সকে দুই লাখ টাকা, ইতিহাদকে এয়ারওয়েজকে দুই লাখ টাকা এবং বুরাক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেটরকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
Advertisement
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস