পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনের কাউন্ট-ডাউন শুরু না হলেও এখন থেকেই ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা। প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটাররাও করেছেন নানা হিসেব-নিকেশ। মাঠে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেইসবুকেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই শুরু হয়ে গেছে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা।আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন দলীয় ব্যানারে হওয়ার ঘোষণায় অনেকেই দলীয় সমর্থন পেতে ইতোমধ্যে দেন-দরবার শুরু করেছেন। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীও আগাম তৎপরতা শুরু করেছে। মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে আওযামী লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মেয়র পদে দুই মেরুর ‘দুই রাজনৈতিক অভিভাবক’ মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরীর নাম বেশ আলোচিত হচ্ছে। তবে তাদের দুজনই দলের নেতাকর্মীরা চাইলেই প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন এ প্রতিনিধিকে। ২৫ বর্গমাইল আয়তনের ‘গ’ শ্রেণিভূক্ত মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করবে না পৌরবাসী। সেদিক থেকে যে দল সবমহলে জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী দিতে পারবে নির্বাচনের ফলাফল তাদের ঘরেই যাবে। গেল উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজয়ের পর বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনকে ‘প্রেসটিজ ইস্যু’ হিসেবে গ্রহণ করেছে শাসকদল আওয়ামী লীগ। বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই দল দুটি নিজেদের ঘর গুছিয়ে এনেছে। পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তুষের আগুনে জ্বলছে এ দুই রাজনৈতিক শিবিরে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সাথে সাথেই সে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক নেতা। মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক ছাড়াও মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ ফরাজী, মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর আলম ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়নের জন্য তৃনমূল থেকে জেলার শীর্ষ পর্যায়ে ছুটছেন। লক্ষ্য একটাই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা। প্রথমবারের মতো দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনকে পেতে যাচ্ছেন সরকারি দলের মনোয়ন ? কার হাতে যাবে দলের নৌকা প্রতীক এমন আলোচনা সর্বত্র। তবে সম্ভাব্য সব প্রার্থীই দলীয় সমর্থন পেলেই মেয়র পদে ভোট করবেন বলে জানিয়েছেন এ প্রতিনিধিকে।দলীয় প্রার্থী যেই হোক একটি সফল নির্বাচনের মাধ্যমে ‘মেয়র’ পদে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে প্রস্তুত দলের নেতাকর্মীরা এমনটা বলেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী ছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোয়নয় পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন গেল পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাটিরাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বাদশা মিয়া। ইতোপূর্বে অনেকের নাম আলোচিত হলেও তারা ভোটের ময়দান থেকে নিজেদের গুটিযে নিয়েছেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর বাইরে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীকদল জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. আমান উদ্দিন ভূঁইয়া (আমান হুজুর) এর নাম আলোচিত হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে।এদিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়ন কাজ না হওয়া, পৌর সদরের বিপর্যস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলোকরণ না করা, পৌরসভা এলাকায় বিদ্যুতায়ন না হওয়াসহ বিএমডাব্লিওএফ প্রজেক্টের অর্থ ফেরত যাওয়ার অভিযোগ করে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা বলেন, পৌরসভার ‘মেয়র’ হিসেবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা হলেই দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমি সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। পৌরসভাকে পৌরবাসীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করেছি। এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্রয় দেইনি। এদিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচনকে সামনে রেখে একক প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। বিএনপির ভোট ব্যাংকে আঘাত হানার সামর্থ্য সরকারি দলের এখনো হয়নি বলে দাবি এ নেতার। তিনি পৌরসভা নির্বাচনকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখছেন।এমএএস/এমএস
Advertisement