নীল আকাশটা যেন ভেঙে পড়েছে শিমুলের মাথায়! নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতো কোনো যুক্তি-প্রমাণই তার নেই। সবচেয়ে বড় কথা শর্মীর সঙ্গে এখন কোনো যোগাযোগই নেই! ফোনে সেভ নেই নম্বর, ফেসবুকেও ব্লকলিস্টে! যখনই নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে শুরু করেছে; তখনই অভিযোগ!
Advertisement
তার খুব কাছের একজনকে শর্মী বলেছে, ‘শিমুল আমাকে ফেসবুকে ও ফোনে বিরক্ত করে, কুপ্রস্তাব দেয়। এগুলোর সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
এতেই নিজের ছোট্ট পরিমণ্ডলে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা শিমুলের ভাবমূর্তি যেন ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। কপালে লেগে যায় চরিত্রহীনতার তকমা। পাড়ার বখাটে ছেলে আর তার মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পায় না পরিচিতজনরাও! অভিযোগ পরিবার পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। বাবা রেগে বলেন, ‘তুমি কী কোনোদিন শুধরাবে না? যদি ভালো না হও, তাহলে মনে রেখো দুষ্টু গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।’
সবার কাছে শিমুল যে পরিমাণ ছোট হয়েছে; তাতে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখতেও ঘৃণা লাগছে। অথচ শর্মীর জন্যই সে কাঁচা হাতে কত গল্প-কবিতা লিখেছে। সে যতবার ফোন দিয়েছে; ততবারই কেটে দিয়ে নিজে ফোন দিয়েছে। একটি পয়সা খরচ করেও যেন তাকে আফসোস করতে না হয়!
Advertisement
নিজের সেই বিবর্ণ গল্প মনে পড়ে যায় শিমুলের। পরিচিত একজনের সূত্র ধরেই শর্মীর সঙ্গে তার পরিচয় অনলাইনে। বন্ধুত্ব হয়, কথাও হয় সেখানে। কখনো কখনো তারা নিজেদের গল্পেই হারিয়ে যেত। শর্মীও জানায়, তার বয়ফ্রেন্ড ছিল। পরে ব্রেকআপ হয়েছে।
সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি শিমুল। একবছরের মাথায় সে শর্মীকে জানায়, ‘আপনার আপত্তি না থাকলে পরিবারকে জানিয়ে বিয়েটা করে ফেলি।’
বেঁকে বসে শর্মী। রেগে বলে, ‘সব পুরুষই সুযোগ খোঁজে।’ যোগাযোগ বন্ধ হয় দু’জনের।
এরপর দ্বিতীয় পর্যায়। শর্মীর প্রতি দুর্বলতা ছিলই। তাই সে একটি সংকটে পড়লে উপযাচক হয়ে উপকার করে দেয় শিমুল। ফের ভাঙা সম্পর্কটি জোড়া লাগে।
Advertisement
ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট ও ফোনে কথা শুরু হয় আগের মতোই। মাঝে মাঝে দেখাও করতো তারা। শিমুল তাকে পছন্দ করে, এটা যেহেতু শর্মী জানেই। তাই শিমুলও ধরে নেয়, এবার আর সে তাকে ফেরাবে না। শর্মীও নিজের ঘর থেকে শুরু করে বাইরের নানা বিষয় শিমুলকে জানাতো। পরামর্শও নিত। সম্পর্কটা যেমন গভীর নয়; তেমনই অগভীরও নয়। যদিও সম্বোধন সেই ‘আপনি’তেই আছে আটকে।
তার ইতিবাচক মনোভাব দেখেই এবার শিমুল বলে, ‘আমি আপনার অভিভাবকের কাছে যেতে চাই। বিয়ের জন্য আর সময় নেব না।’
শর্মী এবার চড়া মেজাজে বলে, ‘আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো? আমি তো একজনকে ভালোবাসি!’
রেগে যায় শিমুলও। বলে, ‘আপনি না প্রথমে অন্য কথা বলেছিলেন। এটাও জানিয়েছেন, লোকে বিরক্ত করে বলে সবার সামনে নিজেকে এনগেজড বলে পরিচয় দেন। আর আপনি যদি আমাকে বলতেন যে, একজনকে পছন্দ করেন। তাহলে তো আমি আমার এত সময় আপনার পেছনে নষ্ট করতাম না!’
এই বলে সে তার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। কিন্তু কপাল খারাপ এখন কোনো প্রকার বিরক্তিকর পরিস্থিতি না পেয়েই বুঝি শর্মী ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করেছে!
শিমুলের ধারণা, শর্মী হয়তো ভেবেছে যে জায়গাগুলোতে সে তার মাধ্যমে উপকার পেয়েছে। সেগুলো হয়তো ভণ্ডুল হতে পারে! তাই সে নিজের স্বার্থেই এ অভিযোগ করেছে। সে তো জানেই- বর্তমান সমাজ পুরুষের বিরুদ্ধে করা নারীর অভিযোগকেই সবার আগে আমলে নেয়। পুরুষ আইনিভাবেও জামিন অযোগ্য ধারার আসামি হয়ে যায়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাওয়ার আগেই জলঘোলা হয়ে যায় অনেক বেশি।
অনেকটা নিসঙ্গ শিমুল। পরিবার ও পরিচিতজনদের কাছেও চরম হেয় হয়েছে। অন্তত একটা উপায় চাই, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের। না হলে পরিবারসহ সবার কাছে আজীবন ছোট থাকতে হবে। সেই পুরনো কললিস্ট পাওয়া যাবে না। ব্লক করে দেওয়ার আগে মেসেঞ্জারও সাফ করেছে সে! আগের ও পরের কথা না দেখিয়ে অন্যপাশে সঞ্চিত তথ্যে সহজেই তাকে সাইবার বুলিংয়ের জন্য দায়ী করা যাবে! এক্ষেত্রে সব দোষ থাকে পুরুষেরই।
এসময় সে প্রমাণটা পেয়ে যায়। প্রমাণপত্র হাতে নিয়ে হাঁটা দেয় বাসার দিকে। কিন্তু পথে ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
না, সিনেম্যাটিক মৃত্যু নয়। বিদ্যুতের তারে বসে থাকা কাক তার মাথায় মলত্যাগ করে দিয়েছে! সেই মল মাথা দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে পিঠে। বিচ্ছিরি দশা!
তারপরও সে ছুটে বাসায় গিয়ে বাবাকে আগে কাগজটা দেয়। ঘরে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে বিরক্ত বাবা। বলেন, ‘কী এটা?’
শিমুল জানায়, ‘আমার কললিস্ট। এটা দেখলেই সব বুঝতে পারবে। শর্মীর সঙ্গে আমি কত ঘণ্টা কথা বলেছি। আর কয়টা কল সে আমাকে দিয়েছে! দিন-রাতের কোন সময় কথা হয়েছে, ইত্যাদি।’
বাবা কাগজটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘যাও, পরিষ্কার হয়ে আসো।’
গোসল সেরে ফিরে এলো শিমুল। বাবা তার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘কাকের মল সহজেই ধুয়ে সাফ করলে। কিন্তু মনে রেখ, দাগ যদি চরিত্রে লাগে তাহলে সারাজীবনের কলঙ্ক হয়ে লেপটে থাকবে। কোনোদিন তা মুছতে পারবে না। সতর্ক হও, সাবধান হও।’
এসইউ/এমএস