ধর্ম

আল্লাহ তাআলা জগত সৃষ্টি করেছেন কত দিনে?

 

আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালামকে। যার থেকেই সব মানুষের সৃষ্টি। এ সমূদয় সৃষ্টিতে রয়েছে আল্লাহর সুনিপুন কলা-কৌশল। কিন্তু এ সব সৃষ্টিতে আল্লাহ তাআলা কী পরিমাণ সময় নিয়েছিলেন? কুরআন হাদিসে এ সম্পর্কে নির্দেশনাই বা কী?

Advertisement

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের তিন স্থানে বিশেষভাবে আসমান-জমিনসহ সব সৃষ্টির বর্ণনা দিয়েছেন। হাদিসের বর্ণনায়ও রয়েছে এসবের বিবরণ। তাহলো-- তিনিই সেই মহান সত্ত্বা; জমিনে যা কিছু আছে সেসব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেছেন। বস্তুত তিনি তৈরি করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৯)

- ‘বলুন, তোমরা কি সেই সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে? আর তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : আয়াত ৯)

তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। আর চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন- পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্য।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : আয়াত ১০)অতপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : আয়াত ১১)

Advertisement

অতপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দুই দিনে সাত আকাশে পরিণত করে দিলেন। আর প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ পাঠালেন। আমি কাছাকাছি আকাশকে প্রদীপমালা (চাঁদ-সূর্য) দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।’ (সুরা হা-মিম সাজদা : আয়াত ১২)

- তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যোলোক প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন। পাহাড় তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ (সুরা নাজিয়াত : আয়াত ২৭-৩২)

পৃথিবীর সৃষ্টির এসব অতি সুন্দর বর্ণনা ও রহস্য সম্পর্কে তাফসিরে ও হাদিসের ভাষ্য হলো- হজরত আবদুল্লাহ বিন সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে রোববার থেকে মাখলুকের সৃষ্টি শুরু হয়। দুই দিনে সৃষ্টি করা হয় জমিন। জমিনের সব জিনিস সৃষ্টি করা হয় দুই দিনে। আর দুই দিনে আসমান সৃষ্টি করা হয়। শুক্রবারের শেষাংশে আসমানের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সে সময়ই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয় আর এ সময়টিতেই কেয়ামাত সংঘটিত হবে।’ (তাফসিরে ইবনে জারির)

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন যে, আল্লাহ তাআলা মাটি সৃষ্টি করেছেন শনিবারে, পাহাড় রোববার, বৃক্ষরাজি সোমবারে, খারাপ জিনিসগুলো মঙ্গলবার, আলো বুধবারে জীবজন্তু বৃহস্পতিবার আর হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন শুক্রবার আসরের নামাজের পর। সেই দিনের শেষ সময় আসরের নামাজের পর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত।’ (মুসলিম, নাসাঈ)

Advertisement

কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জগত সৃষ্টিতে আল্লাহ তাআলা ছয়দিন সময় নিয়েছিলেন। শুক্রবারে হজরত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি বাস্তবায়িত হয়েছে।

সুতরাং সপ্তাহের সাতদিনব্যাপীই আল্লাহ তাআলা জগত সৃষ্টি করেছেন। এ সৃষ্টির শুকরিয়া আদায় করা বান্দার একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জগতের সমূদয় সৃষ্টি থেকে উপকার গ্রহণ করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনে তাঁর হুকুম-আহকাম যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস