দেশজুড়ে

বছরজুড়ে বেকার যাদুকাটা নদীর ৫০ হাজার শ্রমিক

যাদুকাটা নামটি শুনলেই শরীরটা ঝিন ঝিন করে ওঠে। তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এটা কোনো তন্ত্র-মন্ত্র বা ভুত-প্রেত ছাড়ানোর যাদু টোনা নয়, সুনামগঞ্জের তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে খাবারের যোগান দেয়া যাদুকাটা নদী।

Advertisement

সুনামগঞ্জের তহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ৫০ হাজার শ্রমিক। নদী ভিত্তিক আয়-রোজগার না থাকায় বালু-পাথর শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাদুকাটা নদীতে মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের পানিতে নেমে আসা বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন করে তিনটি উপজেলার ৫০ হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার চলতি বছর যাদুকাটা নদীর ফাজিলপুর বাল-পাথর মহাল ইজারা না দিয়ে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এ কারণে নদী তীরের অর্ধশতাধিক ক্রাশার মিলের শ্রমিক, নৌযান শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের আয়-রোজগার বন্ধ রয়েছে।

বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ক্রাশার মিলগুলো বন্ধ হয়ে আছে। শ্রমিকদের ছোটছোট নৌকাগুলো নদীর ঘাটে বাঁধা থাকছে দিনের পর দিন।

Advertisement

শ্রমিক আনোয়ারা বেগম বলেন, যাদুকাটা নদীতে এক বছর ধরে কাজ বন্ধ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আগে বালু পাথরের কাম কাজ করে খাইছি, কিন্তু নদী বন্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিনকাল যাচ্ছে।

শ্রমিক জাহানারা খাতুন বলেন, আমরা কাজ করতে পারি না, অভাবের সংসার। ৩ বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে বাসায় বাসায় কাজের সন্ধানে ঘুরি কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। যদি এই নদীটা খুলে দেয়া হতো তাহলে আমাদের সংসারটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই এই নদীটা যাতে দ্রুত খুলে দেওয়া হয়।

শ্রমিক শাবানা বেগম জানান, তার স্বামী প্রায় ৪ বছর আগে মারা গেছেন। দুটি বাচ্চা আছে। নদী যখন খোলা ছিল তখন এই নদীতে কাজ করে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারতেন। কিন্তু নদীটা বন্ধ হওয়ায় খুব কষ্টে আছেন। শ্রমিক শরীফ উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, যাদুকাটা নদী বন্ধ থাকায় কোনো কাজ করতে পারছেন না তারা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলা খুব কষ্ট। সরকার যদি এই নদীটা খুলে দিত তাহলে তাদের কষ্ট দূর হত।

সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমেদ জানান, সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী এখান থেকে বালু-পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলোও এখানকার বালু-পাথর দিয়ে হয়। কিন্তু এক বছর যাবৎ করোনাকালীন সময়ে সরকার একটি সিন্ধান্ত নিয়ে এখানের বালু-পাথর মহালগুলো বন্ধ রেখেছে। যার কারণে লক্ষাধিক শ্রমিক সুনামগঞ্জে বেকার হয়ে গেছে।

Advertisement

তিনি বলেন, এখানে মানুষের কর্মসংস্থান নেই, মানুষ খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে। এতে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ব্যবহত হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আছেন বেকায়দায়। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই এই নদীটা যাতে দ্রুত খুলে দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জাগো নিউজকে জানান, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তলোন বন্ধ রয়েছে। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।

লিপসন আহমেদ/এফএ/এমকেএইচ