দেশজুড়ে

প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসছে নওগাঁ

নওগাঁয় পৌরসভা নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ শুরু করেছেন। তবে জাতীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় পদপ্রার্থীদের মনে হতাশা বিরাজ করছে।জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় তিনটি পৌরসভা অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে নওগাঁ পৌরসভা,পত্নীতলা উপজেলার-নজিপুর পৌরসভা এবং ধামইরহাট উপজেলার-ধামইরহাট পৌরসভা। গত ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারিতে একই দিনে ৩৮টি কেন্দ্রে নওগাঁ পৌরসভা এবং ৯টি কেন্দ্রে নজিপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার নির্বাচন মেয়াদ শেষ হবে ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে। ধামইরহাট পৌরসভা গত ২০০৬ সালের ৩০ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মামলাজনিত কারণে পরবর্তীতে আর পৌরসভা নির্বাচন হয়নি।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হূমায়ুন করিব জাগো নিউজকে জানান, ২০১১ সালের দুইটি পৌরসভার নির্বাচন হলেও মামলা জনিত কারণে ধামইরহাট পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। আদালতের মামলা নিষ্পতি হলে আবারও ধামইরহাট পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌরসভার মেয়র না থাকায় সেখানে প্রশাসককে দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।পৌরসভা নির্বাচনীকে সামনে রেখে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীরা শুভেচ্ছা সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানার টানানো এবং জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের কোনো প্রচার প্রচারণা দেখা যায়নি।বিএনপি-সমর্থকদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র নাজমুল হক সনি, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন আহমেদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান পৌর মেয়র নাজমুল হক সনি জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষা ব্যবস্থা, পানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তার লাইটসহ পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। দল সমর্থন করলে এবং এলাকাবাসী চাইলে তিনি আগামী নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হবেন। তিনি এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।`দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিতামূলক ও পরিচ্ছন্ন পৌরসভা চাই` এ স্লোগানে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানারে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, বিগত ২২ বৎসর যাবৎ নওগাঁ পৌর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তিনি নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পৌরবাসীর সুবিধার্থে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর অফিস স্থাপন, কর প্রদান, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদক ও সন্ত্রাস নিমূর্ল করাসহ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশি। তবে দল সবার ঊর্ধ্বে। ব্যক্তি থেকে দল বড়। দল যাকে সমর্থন করবে আমরা তাকেই মেনে নেব। তবে জাতীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে জানান।জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ লাগিয়েছেন। তিনি পৌরসভাকে আধুনিক ও ডিজিটাল এবং ওয়াইফাই নগরী গড়তে চান।এছাড়া নজিপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়েছেন। তিনি এবারও মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী এবং মেয়র নির্বাচিত হবেন। নজিপুর পৌরসভা বিএনপি থেকে অন্য কোনো প্রার্থী দাঁড়াবেন না বলেও জানা গেছে।নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক নান্নু জাগো নিউজকে জানান, অনেকেই তাদের ইচ্ছেমতো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে কেন্দ্র ও দল থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে।অপরদিকে, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক (বিগত কমিটিতে) ইলিয়াস তুহিন রেজা, নওগাঁ পৌরসভায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাড. খোদাদদ খান পিটু সম্ভাব্য নির্বাচনী মেয়র পদপ্রার্থী। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ব্যানার ও পোস্টার টানানো, জনগণের মাঝে লিফলেট বিতরণ এবং এলাকাবাসীকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক (বিগত কমিটিতে) ইলিয়াস তুহিন রেজাকে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম ও শুভেচ্ছা পোস্টারে নওগাঁবাসীকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। তিনি জানান, নির্বাচিত হলে পৌরসভাসহ নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। দুর্নীতিমুক্ত হলেই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। দুর্নীতিতে যে টাকা খরচ হয় সেই টাকাটা পৌরবাসীর উন্নয়নের কাজে খরচ করা হবে। পৌরসভার প্রতিটি নাগরিক তার পৌর নাগরিক অধিকার ও সেবা সঠিকভাবে পাবেন। পৌরসভার সম্পদ পৌরবাসীর উন্নয়নে ও আধুনিক পৌরসভা বিনির্মাণে ব্যয় করার অঙ্গীকার করে এলাকাবাসীর কাছে দোয়া, সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন।এছাড়াও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ মেয়র পদপ্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল তাকেই সমর্থন করবে এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে নওগাঁ পৌরসভাকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলবেন। পৌরবাসীর উন্নয়নে যা কিছু প্রয়োজন তা করা হবে। পৌর নির্বাচনের জন্য পৌরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। `পরিবর্তন আমার অঙ্গীকার` এ স্লোগানে লিফলেট পোস্টার ও ব্যানারে এলাকার পাড়া মহল্লায় প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাড. খোদাদদ খান পিটু। তিনি জানান, নওগাঁ শহরকে মাদক, সন্ত্রাস, ও যানজটমুক্ত এবং সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী। ইশতেহারে দেখা গেছে, শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য সবুজ খেলার মাঠ, ফুটপাতে পায়ে হেঁটে চলাচল, ওভার ব্রিজ, প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াইফাই ইন্টারনেট এবং ময়লা আবর্জনার জন্য থাকবে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন, থাকবে মশা মাছি নিধন ব্যবস্থা ও সুসজ্জিত যাত্রী ছাউনিসহ অনেক উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।নজিপুর পৌরসভা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র পদপ্রার্থীতে দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরসভার উন্নয়ন করবেন। এছাড়া এলাকবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।নজিপুর পৌরসভা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর মিল্টন উদ্দীন জাগো নিউজকে জানান, তিনি ২ বার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে শুভেচ্ছা সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানারে গত ঈদুল ফিতর থেকে মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দল তাকে সমর্থন দেবেবেলে তিনি আশাবাদী। মেয়র পদে নির্বাচিত হলে পৌরসভাকে একটি মডেল হিসেবে দেখাতে চান। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ও পৌরবাসী তার সঙ্গে আছেন। পৌরসভা নির্বাচনে এলাকাবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া পৌরবাসীকে বিভিন্ন শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার লাগিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ রহমান। ধামইরহাট পৌরসভা থানা আওয়ামী লীগের জয়েন সেক্রেটারি আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, মামলার কারণে গতবার নির্বাচন হয় নাই। তবে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মামলা শেষ হলে নির্বাচন করবেন। দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে জানান, এবারই প্রথম জাতীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্তের পর ও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। অনেকে যে যার মতো করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।এমজেড/পিআর

Advertisement