জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা বানারেরপাড়া এলাকায় আগুনে পোড়ানো ছাড়া ব্লক ইট তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন মো. রোকন আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি উপজেলার বানারেরপাড় এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেনের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পোড়ানো ছাড়া ব্লক ইট তৈরির পদ্ধতি সাজ্জাদ হোসেন নামের এক টেকনিশিয়ানের কাছে দেখেন। পরে তিনি নিজ জেলা জামালপুর সদরে নান্দিনা বানারেরপাড় গ্রামে এসে ২০১৮ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে এই ব্লক ইট তৈরির কাজ শুরু করেন। পোড়ানোবিহীন ব্লক ইট তৈরির উদ্ভাবন বিষয়ে রোকন আহম্মেদ বলেন, ‘জামালপুর-শেরপুর জেলার এই প্রথম পোড়ানোবিহীন ব্লক ইট তৈরি করা হচ্ছে। এই ইট তৈরিতে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের লাল বালি, সাদা বালি ও ভালো মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এটি স্বাভাবিক পাঁচ ইটের সমান কাজ করবে। এই ইটের গাঁথুনিতে সিমেন্ট-বালি কম লাগবে। শ্রমিকের খরচও কম হবে। এছাড়া এই ইট পরিবেশবান্ধব হবে।’
Advertisement
আগুনে পোড়ানো ছাড়া ব্লক ইট তৈরিতে সহযোগিতায় রয়েছেন রোকন আহম্মেদের ভাতিজা সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির এই ইট তৈরিতে প্রতি ইটের খরচ হয় ২৮-৩০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি ইটের সাইজ হয় উচ্চতায় ৮ ইঞ্চি এবং চওড়া ৪.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। এই ইটের দেয়াল গাঁথুনিতে প্লাস্টারের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষেই রঙ করা সম্ভব হয়। তাই এ ধরনের ইট বাজারজাত করতে সুবিধা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রযুক্তির প্রতিটি ইটে ৩০-৩৫ টাকায় (খুচরা হিসেবে) বিক্রি করা যেতে পারে। পাইকারি বিক্রিতে ১-২ টাকা কম হতে পারে।’ ইট তৈরির কারিগর মকছেদ আলী বলেন, ‘এই ইট তৈরিতে এক দিনে দুজন শ্রমিক কাজ করলে ১৫০-২০০ ইট তৈরি করা যায়। এতে প্রতি শ্রমিকের খরচ ৪০০-৫০০ টাকার মতো। এই ইটের উপরে ছিদ্র রয়েছে। যার ফলে এই ইটের গাঁথুনি কক্ষের ভেতর গরমের দিনে ঠান্ডা এবং ঠান্ডার দিনে গরম অনুভূত হবে। কক্ষে ফ্যান বা এসি প্রয়োজন হবে না।’
ব্লক ইট তৈরি উদ্ভাবকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে রোকন আহম্মদ উদ্ভাবিত ইট দিয়ে নান্দিনা বানারেরপাড় এলাকায় মাদরাসার কাছে ৬০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট প্রস্থের একটি তিনতলা ফাউন্ডেশনে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমে এই প্রযুক্তির ইট দিয়ে বিল্ডিংয়ের প্রথম তলার গাঁথুনির কাজ শেষ করা হবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘ছেলের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির ইট আগামী ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে বাজারজাত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির এই ইট কোম্পানির নাম দিয়েছি ‘রিয়াদ ইকো হলো ব্রিকস’। এর সার্ভিস সেন্টার হবে জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা বানারেরপাড় ডিগ্রি মাদরাসা সংলগ্ন।’
এ ব্যাপারে জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি রোকন আহম্মেদের ইট বানানোর নতুন পদ্ধতিটি দেখেছি। যা অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। এই ইট বাজারজাতকরণে আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করলে আমি তা দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
এসআর/এমকেএইচ
Advertisement