নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনা তৈরিতে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগী ও স্থানীয় চাঁদাবাজদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঝে মধ্যে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করতে দেখা যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে।
Advertisement
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২০ ডিসেম্বর) সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলমের নেতৃত্বে বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উচ্ছেদ অভিযানের পর বহু অবৈধ স্থাপনা থেকে যায়।
উচ্ছেদের সময় সওজের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দখলকারীরা এসব দোকান গড়ে তুলে পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। সরকারি রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবৈধ দোকান উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবারো সরকারি রাস্তা দখল করে দোকান বসেছে।
Advertisement
রাস্তা দখল করে অবৈধ দোকান তৈরির কারণ জানতে চাইলে এক হকার জানান, সরকারি জায়গা সরকারি লোকজন এসে উদ্ধার করে চলে যায়। আবার আসে বহুদিন পরে। এই সময় তারা আবার দোকান বসান।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুটপাতের অবৈধ দোকানের মালিকদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে রিপন ওরফে মুরগি রিপনের লোকজন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফ আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জানি না। যদি তিনি (মুরগি রিপন) ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে থাকেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা তাকে ধরে পুলিশে দিক। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারই সওজের উচ্ছেদের দু-একদিন পর পুনরায় হকাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা শুরু করে। কোনো কোনো সময় সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে আগের রূপে ফিরে আসে ফুটপাত। তবে এর পেছনে রয়েছে চাঁদাবাজ চক্রের হাত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের নামে ফুটপাতে হকার বসিয়ে দৈনিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তোলে এ চক্রটি।
তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে রিপন ওরফে মুরগি রিপন নামের এক চাঁদাবাজ তার নিয়োজিত লোকদের (জামাল, শাকিল, নাসির ও রুহুল আমিন) দিয়ে পুলিশের নামে চাঁদা তুলছেন। তাদের পাশাপাশি এ ফুটপাতে একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধির সহযোগী ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা এসব দোকানপাট থেকে দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। দোকানপ্রতি ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয় সংঘবদ্ধ এ চাঁদাবাজ চক্র।
Advertisement
ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগি রিপন ও তার সহযোগীরা প্রতিদিন চাঁদা আদায় করে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বিভাগের নাম ভাঙিয়ে। চাঁদা না দিলে তিনি ও তারা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবসায়ীদের শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি উচ্ছেদের হুমকিসহ পুলিশ দিয়ে হয়রানির হুমকি দেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাকে ও তার নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়।
এস কে শাওন/এসআর/এমএস