মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় বিপদ-আপদ এসে পড়ে। সব বড় সমস্যা ও বিপদ মুমিনের জন্য যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, আবার অবাধ্যদের জন্য আজাবের কারণও বটে।
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চরম বিপদে সব মানুষের জন্য তিনটি আমল করার ব্যাপারে নসিহত পেশ করেছেন। যদি কেউ এ আমলগুলো যথাযথভাবে করে তবে অবশ্যই মহান আল্লাহ ওই বিপদ থেকে তার বান্দাকে হেফাজত করেন। তাহলো-- সাধ্যানুযায়ী সাদকা বা দান করারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘তোমরা সাদকা কর। আর সাদকা দ্বারা রোগীর রোগ চিকিৎসা কর। কেননা, সাদকা রোগ এবং বালা-মুসিবত দূর করে এবং আয়ু (হায়াত) ও নেকি বাড়িয়ে দেয়।’ (বায়হাকি)উল্লেখ করা যেতে পারে-সাদকার মাধ্যমে নিশ্চিত মৃত্যুর রোগীর পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল। তিনি হলেন- দামেস্কের হাসপাতালে চাকরিরত অবিবাহিত ডা. ঈসা মারযুকি। অসুস্থতায় পড়লে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায় যে, তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত।ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হলেও তিনি সুস্থ হচ্ছিলেন না। দিন দিন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেডিকেল রিপোর্টে জানা যায়, দিন কয়েক তিনি পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারেন। এ কথা শুনে ডা. ঈসা মারযুকির একটি হাদিসের কথা মনে পড়ে। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাদকার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, আবু দাউদ)
তখনই ডা. ঈসা মারযুকি সাদকার মাধ্যমে চিকিৎসা লাভে তার সম্পদের অবশিষ্ট অংশ এক নিঃস্ব পরিবারকে দান করেন। যে পরিবারের অর্থকষ্টের কথা তার জানা ছিল। তার এক বন্ধুকে দিয়ে ওই বাড়িতে সাহায্য পৌঁছে দিলেন। তাদের জানালেন, সে এ সাদকার মাধ্যমে আরোগ্য লাভের আশা করে। অতএব তারা যেন তার সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।
আলহামদুলিল্লাহ! হাদিসের এ আমলে মেডিকেল রিপোর্টকে মিথ্যা প্রমাণিত করে ডা. ঈসা মারযুকি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠলেন। ডা. ঈসা মারযুকির চিকিৎসকদের বোর্ড তার পরবর্তী রিপোর্ট দেখে এ মর্মে আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, ডা. ঈসা মারযুকি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন; তা হতেই পারে না। তিনি বোর্ডকে জানালেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়েছি। আল্লাহ তাআলা আমাকে সাদকার মাধ্যমে সুস্থতা দান করেছেন।’
Advertisement
- সঠিক পদ্ধতিতে ইসতেগফার করাকুরআন-সুন্নাহ সম্মত উপায়ে আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা। বেশি বেশি ‘রাব্বিগফিরলি (رَبِّىْ اغْفِرْلِىْ)’, ‘আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি (اَسْتَغْفِرُ الله وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ)’ পড়া। হদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি সব সময় ইসতেগফার করতে থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে সংকট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন। যাবতীয় দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ও প্রশান্তি দান করেন আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন।’ (আবু দাউদ)
মনে রাখা জরুরি-যখন গোনাহ বেড়ে যায়, তখন মানুষের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা তখন বেড়ে যায় এবং ওই ব্যক্তির মানসিক অশান্তিও তীব্র হয়। তাই গোনাহ, একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা মহান আল্লাহর সাহায্য ও ইসতেগফার ছাড়া রোধ করা অসম্ভব।
নিশ্চয়ই দুনিয়ার সব গোনাহ, দুঃশ্চিন্তা, অশান্তি ও একাকীত্ব মহান আল্লাহর একটি বাহিনীর মতো। যার মাধ্যমে তিনি তার বান্দাদের পরীক্ষা করে থাকেন। তাই গোনাহ করলে বেশি বেশি ইসতেগফার করা। মনে অশান্তি দেখা দিলে বেশি বেশি নামাজ পড়া এবং একাকীত্ব অনুভূত হলেই বেশি বেশি কুরআনুল কারিম পড়া। কেননা গোনাহ, অশান্তি ও একাকীত্ব দূর করতে দুনিয়াতে বেশি বেশি ইসতেগফার, নামাজ ও কুরআন পড়ার বিকল্প নেই।
- বেশি বেশি দরূদ পড়াবিপদ-মুসিবতে সঠিকভাবে দরূদ পড়া উত্তম আমল। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বেশি বেশি দরূদ পড়া জরুরি। সংক্ষেপে-اَللَّهُمَّ صَلِّى وَ سَلِّمْ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّد‘আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ’
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি নবিজীকে বললেন- 'আমার পুরো দোয়াই আপনার প্রতি দরূদের জন্য নির্ধারিত করে দেব।'তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তাহলে তোমার (সব) ইচ্ছা/অভিপ্রায় (চাওয়া-পাওয়া) পূরণের জন্য এটাই যথেষ্ট হবে আর তোমার গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত তিনটি আমল যথাযথভাবে আদায় করা। ফলে মানুষের বিপদ-মুসিবত, রোগ-ব্যধি, দুঃশ্চিন্তা-হতাশা-একাকীত্ব ও অশান্তি দূর হয়ে যাবে। খুব দ্রুত উপকার লাভে দান-সাদকা, তাওবাহ-ইসতেগফার ও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে প্রমাণিত আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সব বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ও অশান্তি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ