অর্থপাচারকারীদের তালিকা চাওয়ার পর এবার দ্বৈত নাগরিক ও পাসপোর্টধারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে যারা আসা-যাওয়া করে, তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে।
Advertisement
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে (ইমিগ্রেশন) এ তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। আদেশে বিশেষ শাখার সুপারকে (ইমিগ্রেশন) এ মামলায় ১১ নম্বর বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত করেন আদালত।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ তালিকাটি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারকে একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Advertisement
আইনজীবীরা জানান, অর্থপাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছেন অথবা কিনেছেন, সেই বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে দেশে-বিদেশে নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে বক্তব্য দেন। তারপর এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অর্থপাচারকারীদের তালিকা চেয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
এরপর গত ১৭ ডিসেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে অর্থপাচারকারীদের তালিকা দিলেও তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেননি হাইকোর্ট। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ মামলায় অর্থপাচারকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিতে সময় নির্ধারণ করেন আদালত।
গত ১৮ নভেম্বর ডিআরইউর এক অনুষ্ঠানে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অর্থপাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেলেন। তবে সেদিন কারও নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
Advertisement
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর গত ২২ নভেম্বর অর্থপাচারকারী, দুর্বৃত্তদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি-না, তা জানতে চান হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়। এছাড়া প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা রুলে জানতে চাওয়া হয়।
নির্দেশ অনুযায়ী গত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
এফএইচ/এসজে/জেআইএম/এমএস