‘মুহাম্মাদ’-এমন একটি মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ নাম; যা সর্বকালের জাতিগোষ্ঠী ও ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় সবার কাছেই সর্বাধিক প্রশংসিত। সর্বযুগের সেরা নাম হিসেবেও বিবেচিত। কেননা ‘মুহাম্মাদ’ শব্দের অর্থই হলো- ‘প্রশংসিত’।
Advertisement
‘মুহাম্মাদ’ জনপ্রিয় নাম হওয়ার কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের আগেও আবের বিখ্যাত ৩ ব্যক্তি তাদের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মা যখন তাঁকে গর্ভেধারণ করেন, তখনই তিনি গর্ভের সন্তানের নাম কী রাখবেন; এ ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছিলেন। তখনই তিনি তৎকালীন আরববিশ্বের অন্যতম অভিনব ‘মুহাম্মাদ’ নাম রাখার ব্যাপারে মনোস্থির করেন।
জনপ্রিয় ও সুবিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ ইবনে হিশামের বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে। এমনকি বিশ্বনবির আগে যারা তাদের সন্তানের নাম ‘মুহাম্মাদ’ রেখেছিলেন, তাদের পরিচয়ও তুলে ধরা হয়েছে। তারা হলেন-
Advertisement
- ‘মুহাম্মাদ’ ইবনে সুফিয়ান বিন মুজাশি। তিনি ছিলেন আরবের বিখ্যাত কবি ফারাজদাকের দাদার দাদা।
- ‘মুহাম্মাদ’ ইবনে উহাইহা ইবনে আল জাল্লাহ এবং
- ‘মুহাম্মাদ’ ইবনে হিমরান ইবনে রাবিয়াহ। তারা উভয়েই মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন।
‘মুহাম্মাদ’ নাম রাখার কারণ
Advertisement
উল্লেখিত তিন ব্যক্তির নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাখার একাধিক কারণ বর্ণিত হয়েছে এ সীরাত গ্রন্থে। তাহলো-
- সবারই ইচ্ছা ছিল তাদের সন্তান রেসালাতের অধিকারী হোক। কেননা তাদের প্রত্যেকের বাবাই জানতে পেরেছিলেন যে, তৎকালীন সময়ে আরবে আল্লাহর রাসুলের আগমন ঘটবে। আর তার নাম হবে ‘মুহাম্মাদ’। আর তিনি হিজাজে জন্ম গ্রহণ করবেন। এ ভবিষ্যৎ বাণী জানার পর তাদের প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা জন্মে যে, তাদের সন্তানই হোক আল্লাহর রাসুল।
- এ তিন জনের প্রত্যেকের বাবা তৎকালীন সময়ে আসমানি কিতাবের জ্ঞান রাখে এমন এক বাদশাহর কাছে যান এবং তার কাছে জানতে পারেন যে, ‘মুহাম্মাদ’ নামে একজন আল্লাহর নবির আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। সে সময় তারা বাড়ীতে নিজ নিজ স্ত্রীকে গর্ভবর্তী দেখে এসেছিলেন। ফলে প্রত্যেকেই সিদ্ধান্ত নেন, যদি ছেলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তবে তার নাম রাখবেন- ‘মুহাম্মাদ’। আর তাদের তিন জনেরই ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। রেসালাতের অধিকারী হওয়ার জন্য তারা তাদের সন্তানের নাম রাখেন ‘মুহাম্মাদ’।
ইসলামের আগের যুগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মানুষও রেসালাতের মর্যাদা লাভের আশা করতেন। তারা জানতেন, এটি অনেক বড় মর্যাদা ও সম্মানের। সে কারণেই তারা তাদের সন্তানের নাম ‘মুহাম্মাদ’ রেখেছিলেন। যদিও তারা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের পর তার রেসালাতের ঘোষণা শুনে তাকে সত্যবাদী জানার পরও অবিশ্বাস করেছিল।
সুতরাং ‘মুহাম্মাদ’ এ যুগের জনপ্রিয় ও সর্বাধিক রাখা নাম নয় বরং ‘মুহাম্মাদ’ নামটি অন্ধকার যুগেও ব্যাপক জনপ্রিয় ও অভিনব নাম ছিল। যা চিরকালই প্রশংসিত নাম হিসেবে ব্যবহার হবে।
উল্লেখ্য, আরববিশ্বে এখনও যে কাউকে সম্বোধন করতে গিয়ে যে নামটি বেশি উচ্চারণ হয়; তাহলো- মুহাম্মাদ; অতপর আব্দুল্লাহ। যেমন বাবা কিংবা পরিচিত জন তাদের সন্তানকে কিংবা পরিচিতদের এভাবে সম্বোধন করে কথা বলেন- মুহাম্মাদ, চল। মুহাম্মাদ, খাও। মুহাম্মাদ, এটা করা ইত্যাদি।
সুতরাং ‘মুহাম্মাদ’ এমন একটি নাম; যে নামের সম্মান ও মর্যাদা যেমন যুগে যুগে ছিল, এখনও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। তাই ‘মুহাম্মাদ’ নামের প্রচার ও প্রসার ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখাই হবে মুমিন মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম ‘মুহাম্মাদ’-এর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের তাওফিক দিন। এ নামে নিজ সন্তানদের বেশি বেশি নামকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম