গেটম্যান না থাকা আর তাদের গাফিলতিতেই জয়পুরহাটের পুরানাপৈল রেল ক্রসিংয়ে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, শনিবারের ট্রেনের সঙ্গে বাসের দুর্ঘটনাটিও ঘটেছে গেটম্যানের গাফিলতি আর অসতর্কতায়।
Advertisement
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক সময় তারা ঘুমিয়ে থাকেন। পথচারী বা মসজিদের মুসল্লিরা গেট নামিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন অনেকবার। এই ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি যদিও তদন্ত শুরু করেছে, শেষ পর্যন্ত তাদের সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না বলেও ক্ষোভ দেখিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই।
রেল বিভাগ বলছে, সান্তাহার থেকে হিলি পর্যন্ত ৩৮টি রেলগেটের মধ্যে মাত্র ২০টিতে গেটম্যান আছে। ২০০৬ সালে আক্কেলপুর উপজেলার আমট্র এলাকায় ৩৫ জন, ২০০৯ সালে জয়পুরহাট পৌর এলাকার কাশিয়াবাড়িতে ৬ জন, সর্বশেষ গত শনিবারের দুর্ঘটনায় ২০ জনসহ এসব গেটে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে প্রায় ৬০ জনের মতো। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) পৌনে ৭টার দিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে ভয়াবহ বাস ও ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন নিরীহ বাসযাত্রী। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও চার যাত্রী।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন, রেলগেট ব্যারিয়ার না দিয়ে গেটম্যান নয়ন মিয়া অন্য কোথাও ঘুমাচ্ছিলেন। গেট ব্যারিয়ার না থাকায় নিশ্চিন্তে বাসচালক ওই রেলগেট পার হতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
দিনাজপুরের পাবর্তীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাসটিকে ধাক্কা দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় এক কিলোমিটার। এতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় বাসটি। এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য গেটম্যানকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
পুরানাপৈল রেলগেট এলাকার সানোয়ার হোসেন, মজিবর রহমান, উজ্জ্বল হোসেনসহ স্থানীয়রা বলেন, ‘নয়ন মিয়ার বাড়ি শেরপুর জেলায়। কিন্তু বিস্তারিত ঠিকানা তারা জানেন না। দীর্ঘদিন ধরেই নয়ন, মঞ্জুরুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান নামে তিনজন গেটম্যান ৮ ঘণ্টা পরপর দায়িত্ব পালন করতেন। ঘটনার দিনও ওই সময়ে রেলগেটের দায়িত্ব ছিলেন নয়ন মিয়া।’
দায়িত্ব অবহেলার জন্য নয়ন মিয়া এককভাবে দোষী বলে এলাকাবাসী আরও জানান, ঘটনার পর থেকে নয়ন মিয়াসহ তিন গেটম্যানই পলাতক রয়েছেন।
Advertisement
পুরানাপৈল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত জানান, রেল ক্রসিংয়ে কর্মরত গেটম্যানরা নিয়মিতই অসতর্ক থাকেন। অনেক সময় তারা গেট নামান না। স্থানীয়রা রেল ক্রসিংয়ের ধারে মসজিদে নামাজ পড়তে এসে ট্রেন আসা দেখে গেট নামিয়ে দেন। তারা নেশা ও জুয়ার খেলার সঙ্গেও যুক্ত।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেজা হাসান জানান, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে বিভাগ দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, দিনাজপুরের হিলি রেলওয়ের সিনিয়ার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বজলুর রশিদসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দায়িত্ব অবহেলার জন্য গেটম্যান নয়ন মিয়া এককভাবে দায়ী বলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পলাতক নয়ন মিয়ার অবস্থান বা তার পূর্ণ ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। তদন্তকারী টিম, রেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে তদন্তের স্বার্থে তারা নয়ন মিয়ার অতিরিক্ত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জয়পুরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আরাফাত হোসেন মুন বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে শুধু বরখাস্তই নয়; এর সঙ্গে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা হওয়া উচিত। মামলা হলে অবহেলাকারীরা অনেক সচেতন হয়ে যাবে।
রাশেদুজ্জামান/এসআর/জেআইএম