নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার রাত যেকোনো সময় তাকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে হস্তান্তর করবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৮৯২৮ নম্বরের একটি নেভি ব্লু মাইক্রোবাসে করে তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। মাইক্রোবাসটি চেকপোস্টে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকের সঙ্গে প্রশাসনের কেউ কোনো কথা বলছে না।এর আগে ভারতের দমদম জেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল কলিকাতা-যশোর রোড হয়ে বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল সীমান্তে রওনা দেন। রাত ৯টার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের দলটি ভারতীয় চেকপোস্ট আসে। এরপর বিজিবি-বিএসএফ বেনাপোল চেকপোস্ট বিজিবি ও পেট্রাপোল বিএসএফ ক্যাম্পে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা যায়।সন্ধ্যা ৭টার দিকে চেকপোস্টের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় বিজিবি ও কাস্টমস। সেই সঙ্গে চেকপোস্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বাইরের কাউকে চেকপোস্ট এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। রাত ১০টার দিকে ভারতীয় বিএসএফের ৪০ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন। এ সময় বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি ১৫মিনিট পর আবার ভারত সীমান্তে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুন সালাম ও পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান। তারাও ১০ মিনিট পর ফিরে আসেন।বৃহস্পতিবার রাতের যেকোনো সময় নূর হোসেনকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে বিকেলের দিকে খবর আসার পরপরই স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন চেকপোস্ট এলাকায়। নূর হোসেনকে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে- এ খবর সরকারি দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা স্বীকার করতে চাননি। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা কর্মকর্তা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নূর হোসেনকে বেনাপোল দিয়েই হস্তান্তর করা হবে।ভারতীয় পুলিশ নূর হোসেনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এ সময় বিএসএফের ৪০-ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল কে এস শুকলা উপস্থিত ছিলেন। প্রক্রিয়া শেষে বিএসএফ তাকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাকে সরাসরি সড়ক পথে নারায়নগঞ্জে নিয়ে যাবে নাকি আকাশ পথে নিয়ে যাবে এটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে নারায়নগঞ্জ পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন জানান, প্রক্রিয়া শেষ করে তাকে (নূর হোসেন) দেশে পুশব্যাকের পরেই সরাসরি নারায়ণগঞ্জ আনা হবে। কারণ নারায়ণগঞ্জ আদালতে তার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। নারায়নগঞ্জের পুলিশের একটি দল ইতোমধ্যে বেনাপোল এসে পৌঁছেছে নূর হোসেনকে নেয়ার জন্য।বিকেল থেকে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক. যশোর বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর লিয়াকত আলী, যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রাব্বী হাশমি, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান, ইমিগ্রেশন ওসি তরিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের চেকপোস্টে অবস্থান নেন।এর আগে বুধবার সকালে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া ও তার দুই সহযোগীকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে, অনুপ চেটিয়াকে যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের আশপাশের কোনো এক জায়গা দিয়ে হস্তান্তর করা হবে। ভারতের বারাসাত জেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল যশোর রোডে রওনা দিয়েছেন। যশোর রোড মানে বেনাপোল-কলকাতা সড়ক।অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের পর পরই নূর হোসেনকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত হস্তান্তর করা বলে ভারত সরকারের কাছ থেকে আভাস পাওয়া যায়।বৃহস্পতিবার রাতের যে কোনোপ সময় নূর হোসেনকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে বিকেলের দিকে খবর আসে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।ইতিমধ্যে যশোর পুলিশ, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পোষাকে ও সাদা পোষাকে চেকপোস্টে অপেক্ষা করছে। চেকপোস্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রবেশ ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নূর হোসেনকে হস্তান্তর করা হচ্ছে কি না তা সরকারি কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমার কাছে এমন কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। যদি হস্তান্তর করে তবে আমি জানতে পারব। যেহেতু আমরা সীমান্তে কাজ করি। তবে নূর হোসেনকে সম্ভাব্য হস্তান্তরের বিষয়টি তিনি নাকচ করে দেননি। পাঁচ মিনিট আগেও আমাকে জানানো হতে পারে বলে যোগ করেন বিজিবি অধিনায়ক।বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসানও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। একটি গোয়েন্দা সংস্থায় যশোরে কর্মরত দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এমন খবর আমরাও শুনছি। কিন্তু কখন কিভাবে হস্তান্তর করা হবে বা আদৌ হস্তান্তর করা হবে কি না সে ব্যাপারে আমরা এখনও কিছু জানতে পারিনি।’ইতিমেধ্যে যশোরের পুলিশ সুপার আনিছরি রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক. যশোর বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর লিয়াকত আলী, যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রাব্বী হাশমিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের চেকপোস্টে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।জামাল হোসেন/এআরএ/এএইচ/বিএ
Advertisement