প্রতিবেশীর অন্যতম প্রধান অধিকার হচ্ছে, তার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও ভালো ব্যবহার করা। প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো আচরণ করা শুধু উপদেশই নয় বরং তা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। কুরআনুল কারিমে এসেছে-‘আর আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কাউকে শরিক কর না। বাবা-মার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসির প্রতিও (সদয় ব্যবহার কর)। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক-গর্বিতদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)
Advertisement
এ আয়াত থেকে প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্ট। সুতরাং কোনো প্রতিবেশীর বিপদে সাহায্য-সহায়তা করতে না পারলেও তার প্রতি উত্তম আচরণ, সুন্দর ব্যবহার করা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক এটি তার নির্ধারিত অধিকার। প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে হাদিসের অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার প্রতিবেশী অধিকার প্রসঙ্গে দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। সেসব দিকনির্দেশনাগুলো সাহাবায়ে কেরামের কাছে তুলে ধরেছেন। উম্মতের জন্য রেখে গেছেন। যাতে কেউ প্রতিবেশীর সঙ্গে অসদাচরণ বা খারাপ ব্যবহার না করে।
হাদিসের বর্ণনায় প্রতিবেশী অধিকার- যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে বিশ্বাস করে এবং প্রতিবেশীর প্রতি অসদাচরণ করবে না, বিচারের দিন তিনি হবে সম্মানিত ও মর্যাদাবান। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং তার অতিথিদের সঙ্গে উত্তম কথা বলে বিচারের দিন তারাও মর্যাদাবান হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করবে এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো কথা বলবে, আল্লাহ তাআলা বিচারের দিন তার সঙ্গে উত্তম কথা বলবেন।’ (বুখারি)
Advertisement
- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনকে বিশ্বাস করে সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দিয়ে তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে।’ (মুসলিম, মিশকাত)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করেন। এমনকি আমার মনে হলো যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বা উত্তরাধিকার বানিয়ে দেবেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
প্রতিবেশীদের প্রতি অবহেলায় হাদিসের বর্ণনা- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে মুমিন নয়; যে ভরাপেটে খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।’ (বুখারি, তাবারানি, বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৩বার) বলেছেন, আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়; আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়; আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়।জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! কোন ব্যক্তি?তিনি বললেন- ‘যে ব্যক্তির প্রতিবেশী তার ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকে না।’ (বুখারি)
Advertisement
- অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যার ক্ষতি থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না।’ (মুসলিম)
প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হতে হাদিসের বর্ণনা- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিয় সাহাবি হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছেন-হে আবু যর! যখন তুমি (ঝোল তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীর প্রতি খেয়াল রাখ।’ (মুসলিম)
- অন্য এক বর্ণনায় আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমাকে আমার বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসিয়ত করে বলেছেন যে- যখন তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশি কর। অতপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমতো পৌঁছে দাও।’ (মুসলিম)
প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় উপকারিতা-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, সুন্দর চরিত্র অবলম্বন করা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ব্যবহার রাখায় দেশ আবাদ থাকে এবং হায়াত (আয়ু) বেড়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি)
প্রতিবেশীর অধিকার নিশ্চিত করতে কুরআন-সুন্নাহর এ দিকনির্দেশনা ও অসিয়তগুলোই যথেষ্ট। প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় সচেতন হলে এবং কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করলেই পারস্পরিক সম্প্রীতি, সুন্দর সমাজ ও সুসম্পর্ক গঠন করা সম্ভব।
প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় করণীয়ইসলামে বিশ্বাসী মুমিন মুসলমানের জন্য এ বিষয়টি পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার জন্য, নিজেদের হায়াত বৃদ্ধির জন্য প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ একটি অন্যতম শর্ত ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। সুতরাং শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় মুমিন মুসলমানসহ সবার করণীয় হলো-- প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত হলে তার সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেয়া। (মুসলিম)- প্রতিবেশীকে অযথা হয়রানি না করা।- প্রতিবেশীর দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে সাধ্যানুযায়ী উপহার-উপঢৌকন দেয়া। (মুসলিম)- প্রতিবেশী অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া এবং তার সেবা করা।- প্রতিবেশী মারা গেলে তার দাফন-কাফন ও জানাযায় অংশগ্রহণ করা।- প্রয়োজনে প্রতিবেশিকে আর্থিক ঋণ দেয়া।- প্রতিবেশীর সঙ্গে সব সময় বিনয়ের সঙ্গে কথা বলা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে প্রতিবেশীর অধিকার যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। কুরআন হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ে সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ঈমান ও হায়াতকে বাড়িয়ে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস