‘দেখা আরিচার ঘাটে, শাহ জালাল ফেরিতে রংপুরী এক ছোকরা বন্ধুর সাথে। নাইট কোচে যাইতে ছিলাম আমি আর বাবায়। ছোকরা কেবল আমার পানে ড্যাব ডেবাইয়া চায়।’
Advertisement
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী দিলরুবা খানের গাওয়া এই গানের মতো ফেরি কিংবা দূরপাল্লার কোচ এখন কোনোটিই নেই আরিচা ঘাটে। ফেরি ঘাট পাটুরিয়ায় স্থানান্তরের পর থেকেই প্রাণহীন হয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট। ফেরির হুইসেল, দূরপাল্লার যানবাহনের শব্দ কিম্বা হাজারো মানুষের কর্মচাঞ্চল্য এখন শুধুই স্মৃতি।
তবে প্রায় ২০ বছর পর আবারও প্রাণ ফিরতে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে। আগামী বছরের শুরুতেই আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেরি চলাচল শুরু হলে একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে, তেমনি চাপ কমবে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরও। ঘাটের দুই প্রান্তে প্রসার ঘটবে ব্যবসা বাণিজ্যের।
Advertisement
নৌ-রুট চালু করতে এরই মধ্যে চ্যানেলে ড্রেজিং ও দুই ঘাটে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান জানান, দুই প্রান্তের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দিকে ৪টি কে-টাইপ ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার শুরু হবে।পরবর্তীতে ফেরি সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ঘাটটি চালু হলে রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি যমুনা সেতুতে ৩০ টনের অধিক মালামাল বহন করার নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক ট্রাক এই ফেরিতে পারাপারের সুবিধা নেবে। এতে মানুষের সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান বলেন, ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার খবরে আরিচাসহ নদীর দুই পাড়ের মানুষ বেশ খুশি। ঘাট স্থানান্তর হওয়ার পর অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পুনরায় যদি ঘাটটি চালু হয় তাহলে মানুষের আবার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
Advertisement
এছাড়া এই রুট চালু হলে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহন এবং পায়রা বন্দরের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
একইসঙ্গে আরিচা ঘাটের পাশে সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও মালামাল আনা নেয়ায় বড় ভূমিকা রাখবে এই নৌ-পথ।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, দুই পাড়ের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে ফেরি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফেরি চলাচলের উপযোগী করতে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে নৌ-চ্যানেলে ড্রেজিং চলছে। আশা করা যায় অল্প সময়ের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এরপরই ফেরি চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে কর্ণফুলি নামে একটি ফেরি দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আরিচা ঘাটের ফেরি সার্ভিস। প্রথম যাত্রায় একটি গাড়ি পার হয়েছিল। সেই গাড়িটিকে ভাড়া গুনতে হয়েছিল ৭৫ পয়সা। ১৯৮৩ সালে নদী বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায় আরিচা ঘাট।
১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু (তৎকালীন যমুনা বহুমুখি সেতু) চালু হলে আরিচা ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমতে থাকে। এর মাঝেই প্রকট হয় নাব্য সংকটও। ফলে ২০০১ সালে ফেরি ঘাটটি পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এরপরই প্রাণহীন হয়ে পড়ে ঐতিহ্যবাহী আরিচা ঘাট।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস