করোনামুক্ত হলেও পরের ক্লান্তি এবং অবসাদ কাটাতে লেগে যায় কিছু সময়। সে কারণে প্রেসিডেন্টস কাপ ওয়ানডে আসরে খেলা হয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি আসর শুরুর আগে হঠাৎ করে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির শিকার হলেন। যে কারণে প্লেয়ার্স ড্রাফটেও রাখা হয়নি মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
Advertisement
এক পর্যায়ে তার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি খেলা নিয়েই দেখা দেয় সংশয়। মাঠে নামার আগে ফিটনেস টেস্ট দিতে হয়। এরপর ফিটনেস টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পর দল পেতেও অপেক্ষায় থাকতে হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় লটারিতে দল ঠিক হয় মাশরাফির। ৮ ডিসেম্বর গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ফিরতি পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম মাঠে নামেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে আহামরি নৈপুণ্য না দেখালেও বল হাতে খারাপ করেননি। ওভারপিছু ৭ রান করে দিয়ে ৪ ওভারের স্পেলে ২৮ রানে এক উইকেট দখল করেন। মাশরাফির মাপা বোলিংয়ে পরিষ্কার বোল্ড হন চট্টগ্রামের মিডল অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ মোসাদ্দেক।
তারপরও শুরু দেখে মনে হয়নি এ আসরে মাশরাফি সাড়া ফেলতে পারেন। বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেও ঝুলিতে জমা পড়ে ১ উইকেট (৪ ওভারে ২৬ রানে)। বলে রাখা ভালো, ওই দুই ম্যাচে তার ব্যাটও কথা বলেনি একদমই (দুই ম্যাচে ১+১ = ২ রান)।
Advertisement
কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে কিছু করতে না পারা সেই মাশরাফি কোয়ালিফায়ার-১ এ গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে হই চই ফেলে দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল হাসান জয়, শামসুর রহমান শুভ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে আউট করে ৩৫ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই সেরা বোলিং এবং প্রথম ৫ উইকেট শিকার।
বল হাতে আগুন ঝরানোর আগে ওই ম্যাচের শেষ দিকে ব্যাট হাতে নেমে দুই বলে এক ছক্কা হাঁকিয়ে ৬ রানে নটআউটও ছিলেন মাশরাফি।
মোটকথা, মধ্য তিরিশ পার করা চিত্রা পাড়ের সাহসী ক্রিকেট যোদ্ধা মাশরাফি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, শুধু ইনজুরিকে অতিক্রম করা নয়, বয়সকে জয় করার অসামান্য ক্ষমতাও আছে তার।
মাশরাফির বোলিংয়ে পরিষ্কার বোঝা গেছে সাফল্যের পথে বয়স বাধা নয়। ইচ্ছা, সংকল্প দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর বুদ্ধি খাটিয়ে জায়গা মতো পারফর্ম করাই আসল।
Advertisement
যে দল রাউন্ড রবিন লিগে ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে, যাদের শৌর্য-বীর্য আর টিম পারফরম্যান্সের সামনে কোনো দল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, সেই ফর্মের চূড়ায় থাকা লিটন দাস-মোস্তাফিজ আর সৌম্য, মোসাদ্দেক ও শরিফুলের গড়া চট্টগ্রাম কোয়ালিফায়ারে বড় ব্যবধানে হেরেছে শুধু মাশরাফির অসামান্য বোলিং দক্ষতায়।
মোটকথা দলকে ফাইনালে টেনে মাশরাফি এখন আলোচিত নাম। তার অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি পরামর্শ, দল চাঙ্গা করার সহজাত ক্ষমতার বাইরে বোলিংটাও ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের বড় অস্ত্র। বিশেষ শক্তি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অধিনায়ক রিয়াদও মাশরাফিকে দলের এক বড় সম্পদ বলে মনে করেন এবং তার দলে আসাটা বড় প্লাস পয়েন্ট বলেই মনে হয় তার।
মাশরাফিকে নিয়ে বলতে গিয়ে জেমকন খুলনা অধিনায়ক রিয়াদ বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, মাশরাফি ভাইয়ের অন্তর্ভুক্তি খুবই ইতিবাচক একটা দিক আমাদের দলের জন্য।’
টিম হোটেল, ড্রেসিং রুম আর মাঠ- সর্বত্রই মাশরাফির উপস্থিতি খুলনাকে উজ্জীবিত করছে। তার অভিজ্ঞতা বাকিরা শেয়ার করছেন। একথা জানিয়ে খুলনা অধিনায়ক বলে ওঠেন, ‘মাশরাফি ভাই অনেক অভিজ্ঞ। তাই ড্রেসিং রুম এবং বাইরেও আমরা আলাপ আলোচনা করি । উনার অভিজ্ঞতার কিছুটা আমরা যদি ভাগাভাগি করতে পারি, এমনকি আমার জন্যও অনেকটা সহায়ক হয়।’
মাশরাফির কাছ থেকে অনেক কিছু আহরণের চেষ্টা রিয়াদের। তার খুব ভালোই জানা যে বিপিএলে মাশরাফি একমাত্র অধিনায়ক, যার আছে চার-চারটি বিপিএল ট্রফি জয়ের অভিজ্ঞতা।
তার নেতৃত্বে বিপিএলে ঢাকা দুবার, কুমিল্লা ও রংপুর একবার করে বিপিএল ট্রফি জিতেছে। শুক্রবারের ফাইনালের আগে মাশরাফির সেই সাফল্যের কথা মাথায় রেখে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর প্রাণপণ চেষ্টায় রিয়াদ। ‘আমি সবসময় মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি, অনেক আইডিয়া নেয়ার চেষ্টা করি। কারণ তিনি শুধু অন্যতম নন, তিনি আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সফল অধিনায়ক। চারটা বিপিএল ট্রফি উনার অধীনে, চারটা ফাইনাল খেলেছেন। উনার অভিজ্ঞতা অবশ্যই বিবেচ্য। যেটা আমাদের দলের জন্য অনেক লাভবান। সো এটার জন্য আমরা ভাগ্যবান।’
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম