স্বাস্থ্য

প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি বাণিজ্য

প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির নামে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা ও ভর্তি নীতিমালা অনুসারে জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও নানা অপকৌশলে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজ তা লংঘণ করেছে। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী প্রতি টিউশন ফি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও মেধাতালিকায় পেছনের থাকা শিক্ষার্থীরা কলেজ ভেদে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি হচ্ছেন। তবে অভিযোগের দায় ও ঝুঁকি এড়াতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত টিউশন ফি’র অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার রশীদ দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। আর এ অপকৌশলের কারণে মেধা তালিকায় থাকা অনেকেই ভর্তি হতে পারছে না।  স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় মেধা তালিকায় থেকেও ভর্তি বঞ্চিত ভুক্তভোগী বহু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণ করতে তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অধিদফতর প্রাইভেট মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিটে (চলতি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে) শিক্ষার্থী ভর্তির হাল নাগাদ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা জারি করেছেন। ১০ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ২২ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে চেয়েছেন।জানতে চাওয়া তথ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- কলেজের প্রতিষ্ঠার সন ও আসন সংখ্যা, সর্বশেষ নবায়নের তারিখ, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রদানের তারিখ, ভর্তি কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবি, আবেদনপত্র বিতরণ শুরু ও শেষের তারিখ, প্রাপ্ত আবেদনের কোটাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা (মেধাতালিকা এ টু জেড), শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু ও শেষ তারিখ এবং মেধাবি ও অস্বচ্ছল বিবেচনায় যোগ্যতম শিক্ষার্থীদের বাছাই কমিটির সভার তারিখ। জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর থেকে প্রাইভেট মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হয়। ২৭ অক্টোবর ছিল আবেদনের শেষ দিন। ৩০ অক্টোবর ছিল প্রাপ্ত সকল আবেদনের কোটাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু ও শেষ তারিখ ছিল ৩১ অক্টোবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানান, মেধাতালিকায় নাম থাকলেও টাকা জোগাড়ে বিলম্ব হওয়ায় তাদের ভর্তি করা হয়নি। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে তারা পরবর্তী মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছেন বলে জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার বাইরের একাধিক মেডিকেল কলেজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ও এর আশেপাশের মেডিকেল কলেজে এ ধরনের অনিয়ম হয়েছে। তারা সুকৌশলে ভর্তির জন্য সীমিত সময় বেঁধে দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি বঞ্চিত করেছেন। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পেছনের সিরিয়ালের শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গাফিলতি বহুলাংশে দায়ী ছিল বলে মন্তব্য করেন তারা। তারা আরো জানান, মেধাবি শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নিতে কিংবা ভালো মেডিকেল কলেজে অপেক্ষমান তালিকায় সুযোগ পাওয়ার আশায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বার বার যোগাযোগের পরও নির্ধারিত সময়ে তারা ভর্তি হতে রাজি হননি। আবার কেউবা টাকা জোগাড় করতে না পারায় বাদ পড়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতররর কর্মকর্তারা জানান, গত বছর বেশির ভাগ কলেজে বহু আসন শূন্য ছিল। ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৬৭ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও পাশ করেছিল মাত্র ২২ হাজার সাতশ ৫৯ জন। কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পাশ করা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থেও দাবি করেছিল তারা। চলতি বছর ৪৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী পাশ করায় তাদের পোয়াবারো। বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা সাত হাজার ৩শ’ ৪৫। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মোট আসনের শতকরা ৫০ ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণে রাখার অনুমতি দিয়েছে। ফলে ৪৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৩৬৭৩টি। প্রতিটি আসনের জন্য ১৩ শিক্ষার্থী দাবিদার হয়েছে। আসন সংকটের দোহাই দিয়ে অবাধ ভর্তি বাণিজ্য হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।অভিযোগের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) মহাসচিব শাহ মো. সেলিম জানান, কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আসেননি। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ যত আবেদনপত্র জমা পড়েছে তার এ টু জেড মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে। কেউ যদি অনিয়ম করে সেজন্য তাকেই জবাবদিহি করতে হবে। এমইউ/এএইচ/পিআর

Advertisement