দেশজুড়ে

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্প

সাতক্ষীরার আশাশুনির ঐতিহ্যবাহী মাদুর শিল্পটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। গত কয়েক বছর আগেও আশাশুনি উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মাদুর রফতানি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নানা সমস্যার কারণে মাদুর শিল্পীরা পেশা ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন।মাদুর শিল্পীরা জানান, মাদুর বুনতে মালির দরকার হয়। বর্তমানে মাদুরের চাষ কমে আসছে। দুই একজন এর চাষ করলেও অনেক বেশি দামে তা কিনতে হচ্ছে। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে পরিবহনযোগে তা বাইরে পাঠাতে গেলেও অনেক খরচ হচ্ছে। ফলে বাইরে মাদুর পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। মাদুর বানাতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, সে পরিমাণ আয় হচ্ছে না। যার কারণে তারা মাদুর বুনতে অনীহা প্রকাশ করছেন।আশাশুনি উপজেলার বড়দল, তেতুলিয়া, শোভনালী, বোলাবাড়ি, কুল্যা, কাদাকাটি, মহাজনপুর, দাতপুর, মষাডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে মাদুর বুনার কাজ করা হয়। মাদুর শিল্পী রাজন জানান, আগে মাদুরের ব্যবসায় লাভ হতো। ভালোভাবে সংসার চলতো, কিন্তু এখন এ ব্যবসা করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাপ-দাদার ঐতিহ্য না হলে অনেক আগেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতাম। শোভনালী এলাকার মাদুর ব্যবসায়ী কার্তিক জানান, আগেকার দিনে নদী পথে বড় দল হাটসহ আশাশুনির বিভিন্ন হাটে মাদুর বিক্রয় করে অনেক লাভ হতো। নদী পথের কারণে পরিবহন খরচও বেশ কম পড়তো। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে নদী পথে আর বিভিন্ন হাটে যাওয়া যায় না। সড়ক পথে পরিবহন খরচ কয়েকগুণ বেশি। লাভও হচ্ছে খুব সীমিত। তাছাড়া মাদুরের কাঁচামাল মালি আগেকার মতো চাষবাদ হচ্ছে না ফলে এ শিল্প দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।কুল্যা ইউনিয়নের বিমল সরকারের সংসারে লোক সংখা সাতজন। ছেলে বৌ সবাই মিলে মাদুর বুনেও তাদের সংসারের অভাব যায় না বলে জানান তিনি। অন্যদিকে মাদুর ব্যবসায়ীরা জানান, একটা মাদুর বুনতে খরজ হয় ১০০/১৫০ টাকা। সময় লাগে ১-২ দিন। একটি মাদুর বিক্রি করে ৫০-৬০ টাকার বেশি লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বুনন শিল্পীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। মাদুর শিল্পীদের অভিযোগ সরকারিভাবে তাদের কোনো সাহায্য সহায়তা করা হয় না।এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম জাগো নিউজকে জানান, সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি। তবে বিভিন্ন বে-সরকারি এনজিও ও সংগঠনগুলো যখন এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের উপর কাজ করে তখন তাদের মাদুর শিল্পীদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এআরএ/পিআর

Advertisement