খেলাধুলা

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়ার দাবি অধিনায়কের

বলপায়ে মুক্তিযুদ্ধ-পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির স্থাপন করেছিলেন বাংলার একঝাঁক দামাল ছেলে। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ফুটবল ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

Advertisement

ঐতিহাসিক সেই দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দাবি জানালেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’কে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের। ৫০ বছর আগের সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বিভিন্ন ম্যাচের গল্প শোনালেন এবং একই সাথে দাবি জানালেন ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হোক।’

‘স্বাধীনতার জন্য ফুটবল দল গঠন হয়েছে- এমন ইতিহাস বিশ্বে আর নেই। আমরা সেই দলের গর্বিত সদস্য। যে দলটি দেশের স্বাধীনতার জন্য ফুটবল খেলে অর্থ সংগ্রহ করেছে, স্বাধীন হওয়ার আগেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে, সেই দলটিকে আমি স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। অতীতেও দাবি জানিয়েছি, আবারও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের দলটিকে যেন স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়’- বলছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু।

ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন জাকারিয়া পিন্টু। কিন্তু তার দাবি পুরো দলকে এই পুরস্কার প্রদান করে সম্মান দেয়া হোক। সরকার এই দলের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু দলকে প্রদান করা হয়নি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার।

Advertisement

এটা নিয়ে অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর অনেক কষ্ট, ‘আমি নিজে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছি। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরেক সদস্য কাজী মো. সালাউদ্দিন পেয়েছেন; কিন্তু আমাদের ইতিহাস গড়া দল এখনো স্বাধীনতা পুরস্কার পায়নি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দলকে এ সম্মান দিলে আমি বেশি খুশি হবো। তা নাহলে আমার একটা কষ্ট থেকেই যাবে।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৪টি ম্যাচ খেলেছিল এই দলটি। ৫ লাখ ভারতীয় রুপি সংগ্রহ করে দলটি দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তহবিলে।

সে সময়ের স্মৃতি হাতড়ে জাকারিয়া পিন্টু বললেন, ‘আমরা কৃষ্ণনগরের নদীয়ায় প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম নদীয়া একাদশের বিপক্ষে। ম্যাচের আগের দিন বলে রেখেছিলাম ম্যাচের সময় ভারত ও বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে হবে; কিন্তু তারা না করে দিলো। আমি বললাম- তাহলে খেলবো না, চলে যাবো। তখন নদীয়ার জেলা প্রশাসক ডিকে দাস সভা ডেকে ৫ মিনিটের জন্য পতাকা ওড়ানোর ব্যবস্থা করলেন। আমি বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালাম, ভারতের পতাকা উড়িয়েছেন ডিকে দাস। আমরা ওই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র করেছিলাম।’

জাকারিয়া পিন্টু গর্ব করে বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা আমি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক। এই দেশে অনেক দলের অনেক অধিনায়ক হয়েছেন, আগামীতেও হবে। কিন্তু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আর কেউ হতে পারবেন না। বিশ্বের অন্য কোথায় মুক্তিযুদ্ধ হলে, ফুটবল দল গঠন হলে তখন হয়তো হবে একজন। কিন্তু বিশ্বে এখন পর্যন্ত আমরাই দেশের মুক্তির জন্য বলপায়ে লড়াই করেছি।’

Advertisement

ভারতে ম্যাচ খেলার সময় নিজেদের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চেয়েও শক্তিশালী মনে করতেন জাকারিয়া পিন্টুরা, ‘বিষয়টি আমাদের দারুণ ভালো লাগতো। তখন আমরা আনপ্যারালাল ফুটবল খেলেছি। মনে হতো সামনে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা- যে দলই আসুক আমরা হারিয়ে দেবো। ম্যাচের সময় আমরা সেটা নিজেরাই বলাবলি করেছি’- বলছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক।

আরআই/আইএইচএস/এমএস