দেশজুড়ে

‘করোনায় কানের জিনিস বন্ধক দিয়া খাইছি’

‘করোনার শুরু থেইকা খুব কষ্টে আছিলাম বাজান। আমার দুই জোড়া কানের দুল ছিল, ওইগুলা বন্ধক দিয়া টাকা নিয়া খাইছি। কি আর করমু। আমাগো পাড়ায় সরকারি চাইল-ডাইল দেয়া হইলেও আমি পাইনি।’

Advertisement

চাঁদপুর শহরের হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বসে শীতের পিঠা বানাতে বানাতে কথাগুলো বলছিলেন মনোয়ারা বেগম। ষাট ছুঁইছুঁই এই নারী কয়লার ঘাট আক্কাস আলী স্কুলের পাশেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।

শীতে পিঠা বিক্রি করেন আর অন্য সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বুয়ার কাজ করেন। তবে করোনার শুরুতে বিপাকে পড়েন মনোয়ারা বেগম। কাজকর্ম বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যান। পরে কানের দুই জোড়া স্বর্ণের দুল বন্ধক রাখা টাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পান।

শীতে ফের পিঠা বিক্রি শুরু করেছেন। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে মনোয়ারা বেগমের। তবে বন্ধকের টাকা এখনো শোধ করতে পারেননি।

Advertisement

মনোয়ারা বেগমের দেশের বাড়ি বলতে কিছুই নেই। থাকেন রেলের জায়গায়। বাবার বাড়ি কোথায় তাও জানে না। কারণ, ছোট বেলায় হারিয়েছেন সব। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্য জায়গায় থাকনে। ছেলেও ১৮ বছর আগে বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। এরপর থেকে মায়ের খোঁজ নেন না। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ঢাকায়, তার স্বামী গ্যারেজে কাজ করেন। তবে মনোয়ারা বেগমের শারীরের অবস্থা ভালো না বলে মেয়ে আবার বাড়ি চলে আসেন।

করোনায় কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে দিন কাটতেছিল। পরে ওয়ার্ড কমিশনার একটা কার্ড কইরা দিছে ১০ টাকা কেজি চাইলের। আবার ঘরে গিয়া তেল ডাইল চাইল দিয়া আইছে।‘

বন্ধক দেয়া কানের দুল কিভাবে ছাড়াবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানি না। ছুডাইতে পারমু কিনা। ১৫ হাজার আনছি এহন ২২ হাজার হইয়া গেছে। না পারলে আর কি করা। ভাবছিলাম শীতে পিঠা বেইচ্ছা টাকা দিয়ে স্বর্ণ ফেরত আনমু। মনে হয় পারতাম না। এডি ছাড়াও আরও সাত হাজার টাকা দেনা আছি। জানি না পারমু কিনা দিতে।‘

নজরুল ইসলাম আতিক/এসজে/এমএস

Advertisement