বিনোদন

অবহেলায় কাঁদছে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের বিদ্যাপিঠ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ব্যক্তিজীবনে সৃজনশীলতার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশ নিয়েছেন। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মানুষকে ভালোবেসে। তিনি তার নিজ গ্রামের অবহেলিত মানুষের মাঝে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা করলেও গেল দুই বছর ধরে মাধ্যমিকে রুপান্তর করা হয়েছে বিদ্যাপিঠকে। এ বিদ্যালয়কে ঘিরে ছিল হুমায়ূন আহমেদের অনেক স্বপ্ন যার কিছু ছিলো জানা, কিছু অজানা। তার মৃত্যুতে অজানা স্বপ্নরা আড়ালেই রয়ে যাবে আজীবন। যে স্বপ্নটা সবাই জানেন সেটা হলো ওই এলাকার শিশুদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার ইচ্ছে ছিলো হুমায়ূনের। কিন্তু সেই ইচ্ছে আজ উড়ে যেতে বসেছে। বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন এলাকাবাসী ও অভিভাবকগণদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শংকা। এর মূল কারণ প্রতিষ্ঠানটি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে অভিভাবক হারিয়েছে, পৃষ্ঠপোষক হারিয়েছে। দিক নির্দেশনাহীন হয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে।এই বিদ্যালয়ে হুমায়ূনের জীবদ্দশায় শিক্ষার্থিরা বিনা বেতনে অধ্যায়ন করত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর স্কুলটিতে কোনো সরকারি সাহায্য ও অনুদান না পাওয়ায় এর অবস্থা এখন বড়ই নাজুক। শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জমানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা জানালেন, তারা গন্তব্যহীন নাবিকের মতোই হাল ধরে আছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু সরকারি সাহায্য বা সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে অচিরেই থেমে যাবে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নযাত্রা।প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘হুমায়ূন স্যার মারা যাবার পর প্রতিষ্ঠানটির চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি যেভাবে এর দেখাশোনা করতেন এখন আর তেমনটি হচ্ছে না। উনার জীবদ্দশায় অনেকেই আসতেন, খোঁজ-খবর নিতেন। এখন কেউ কোনো খবর রাখেন না। কেবল হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহরে আফরোজ শাওন একাই এর তদারকি করে থাকেন। কিন্তু উনি সংসার-সন্তান সামলে এদিকে খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুব জরুরি।’তিনি আরো বলেন, ‘এখানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন খুব কম। কিন্তু গেল দেড় বছর ধরে সেটাও নিয়মিত দেয়া যাচ্ছে না। বিদ্যাপিঠের একমাত্র আয়ের উৎস শিক্ষার্থিদের বেতন-ফি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত ৩৪০ জন শিক্ষার্থি রয়েছে। যে টাকা আসে তাতে বিদ্যাপিঠের খরচ বহন করা মুশকিল।’আসাদুজ্জামান আরো যোগ করেন, ‘শিগগিরই একটা কিছু ব্যবস্থা না হলে অচিরেই থেমে যাবে প্রিয় লেখকের এই স্বপ্ন যাত্রা।’প্রধান শিক্ষক জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। শাওন নিজেও এ ব্যাপারে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন। কিন্তু আশ্বাস দেয়া ছাড়া আর কোনো সাফল্য জুটেনি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া হুমায়ূন আহমেদের বাবার স্মৃতিতে গড়ে ওঠা শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠে।হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্নের বিদ্যাপিঠকে টিকিয়ে রাখতে এমপিও ভূক্তিসহ অচিরেই এর উন্নয়নের জন্য বরাদ্ধ দেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থিসহ স্থানীয়দের। কামাল/এলএ/পিআর

Advertisement