‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’- ইসলামের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেশপ্রেম কেমন ছিল? আবার যুগে যুগে মুমিন মুসলমানের দেশপ্রেমই বা কেমন ছিল। আর আমাদের দেশপ্রেমই বা কেমন হওয়া উচিত?
Advertisement
মক্কা আল-মুকাররমা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় জন্মভূমি। কেমন ছিল মক্কার প্রতি তার ভালোবাসা? ‘হ্যাঁ’ তিনি পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমাকে হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর এ অপরিসীম ভালোবাসার কথা সবাই জানে। ইসলামের দুশমন প্রতিপক্ষরা যখন তাঁকে চরম হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মক্কা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে তখন তিনি পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলেছিলেন-‘(হে মক্কা!) ভূখণ্ড হিসেবে তুমি কতই না উত্তম, আমার কাছে তুমি কতই না প্রিয়। যদি আমার স্বজাতি আমাকে বের করে না দিত তবে কিছুতেই আমি অন্যত্র চলে যেতাম না।’ (তিরমিজি)
পবিত্র নগরী মক্কার প্রতি বিশ্বনবির অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী সব মানুষের জন্য তাদের নিজ নিজ জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা স্থাপনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় আদর্শ।
ইসলামের ইতিহাস সাক্ষী- দেশ, জাতি, ভাষা ও ধর্মের জন্য যুগে যুগে জীবন দিয়েছেন নাম জানা-অজানা অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি। যারা তাদের দেশ, ভাষা ও জাতিকে নিজ সন্তান ও পরিবারের মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসতেন। দেশ ও আদর্শকে ভালোবাসতে গিয়ে অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছেন।
Advertisement
স্বদেশ ও স্বজাতির অধিকার আদায়ে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু সপরিবারে শহিদ হয়েছেন। যুগে যুগে জীবন দিয়েছেন হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, মুহম্মদ বিন কাসিম, সাইয়্যেদ আহমদ শহিদ, ইসমাঈল শহিদ, মীর নিসার আলি তিতুমির, টিপু সুলতানসহ অসংখ্য মুসলিম নেতা উল্লেখ্যযোগ্য।
যারা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য, মানুষের ধর্মীয় ও জাগতিক অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দান করে গোটা উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। কেননা তারা বিশ্বাস করতেন- ‘হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ইমান অর্থাৎ দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’।
এ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই নিরস্ত্র বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জুলুম-শোসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কোটি মানুষের প্রাচীর তৈরি করে অস্ত্রের মুখে বুক পেতে দিয়েছিলেন। ধর্ম-বর্ণ, জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে এ দেশের সব জনগনের সার্বিক প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা।
বাঙালি জাতি পেয়েছেন ১৬ ডিসেম্বরে ঐতিহাসিক বিজয়। পেয়েছেন আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার বাংলাদেশ। গেয়েছেন মুক্তির গান। তারপর থেকেই এ দেশ, বাংলাদেশ; আমাদের ভালোবাসার গোলাপ ও গৌরবের মিনার।
Advertisement
সুতরাং ইসলামে বিশ্বাসী মুসলমানই নয় বরং দেশের প্রতি সব নাগরিকের ভালোবাসা থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে এ ভালোবাসার অনুপ্রেরণা দেখিয়ে গিয়েছেন বিশ্বনবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সাহাবায়ে কেরাম, খোয়াফায়ে রাশেদিনসহ যুগে যুগে অসংখ্য ইসলামি স্কলার ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গ।
তবে ইসলামিক স্কলার ও ব্যক্তিরা কুরআন-সুন্নাহ থেকেও পেয়েছেন দেশপ্রেমের বিশেষ অনুপ্রেরণা। কেননা ইসলামে রয়েছে দেশপ্রেমের অত্যাধিক গুরুত্ব। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-- ‘তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের ন্যায়পরায়ণ শাসকের আদেশ মেনে চল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৯)- ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে যে আল্লাহকে সর্বাধিক ভয় করে।' (সুরা হুজুরাত : আয়াত ১২)
- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি খেদমতের নিয়তে রাসুলের সঙ্গে খায়বার অভিযানে গেলাম। অতপর যখন অভিযান শেষে বিশ্বনবি ফিরে এলেন, ওহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি।' (বুখারি) মদিনার নিকটবর্তী ওহুদের প্রতি এ ছিল বিশ্বনবির ভালোবাসা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজ দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসার বন্ধন অটুট রাখা। বিজয় দিবসে এ ভালোবাসা একে অপরের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে দেশের জন্য দোয়া করা। দেশের কল্যাণে ভালোবাসার সঙ্গে সব কাজে সহযোগিতা করা। আর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে, বিশ্বনবির অনুসরণে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনই হোক প্রতিটি মানুষের প্রকৃত দেশপ্রেম।
এমএমএস/এমকেএইচ