এবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি হিয়েন সোমবার এক বিবৃতিতে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার এবং এর অংশীদারী জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিনের অনুমোদনের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ডোজ পৌঁছে যাবে।
Advertisement
২০২১ সালের মাঝামাঝিতেই ৫৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে প্রায় সবাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছে। লি জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বসবাস করা বাসিন্দাদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন গ্রহণ প্রক্রিয়া হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। এই কাজে কাউকে বাধ্য করা হবে না। লি জানান, প্রথম দফায় দেশটিতে স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির অন্যান্য কর্মকর্তা, বয়স্ক লোকজন এবং করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সবার আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। লি নিজে এবং তার সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তারাও ভ্যাকসিন নেবেন বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে লি বলেন, বয়স্ক লোকজনের সঙ্গে আমি এবং আমার অন্যান্য সহকর্মীরাও প্রথমদিকেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করব। এটা আপনাদের আশ্বস্ত করার জন্য যে, আমার মতো বয়স্ক লোকজন যারা তাদের ভ্যাকসিনের সুরক্ষার ওপর আস্থা রয়েছে।
Advertisement
এর আগে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বাহরাইন ও সৌদি আরবে জরুরি ব্যবহারের জন্য করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে বড় পরিসরে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করার অপেক্ষায় আছে।
তবে ভ্যাকসিন প্রদানকে কেন্দ্র করে আবারও বিতর্কে জড়িয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্তের কারণে হয়তো হোয়াইট হাউসের কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া পিছিয়ে যেতে পারে। প্রথম দফার ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় হোয়াইট হাউসের কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনই হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের কর্মীদের আরও কিছুদিন পরে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
এর আগে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের জেষ্ঠ্য সদস্যদের প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হবে। গত শনিবার ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। এই ঘটনাকে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন বিতরণ তদারকি করার দায়িত্বে থাকা জেনারেল গুস্তাভ পার্না জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সব অঙ্গরাজ্যে ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে। প্রথম দফায় হোয়াইট হাউস কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা সমন্বয় করার কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
Advertisement
সোমবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে প্রথম দফায় ৩০ লাখ ডোজ দেওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার মিশিগানে প্রথম দফায় ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক লোকজন এবং করোনার সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, স্থানীয় সময় রোববার রাতে ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়ে একটি কার্গো বিমান কানাডায় অবতরণ করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, সোমবার থেকে যত দ্রুত সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
রোববার রাতে এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো লিখেছেন, ফাইজার এবং বায়োএনটেকের প্রথম ব্যাচের কোভিড ভ্যাকসিনের ডোজ কানাডায় এসে পৌঁছেছে। ওই টুইট বার্তার সঙ্গে তিনি একটি কার্গো বিমানের ছবি যুক্ত করেছেন। ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের ডোজ ওই বিমানে করেই সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে কানাডার ১৪টি স্থানে ৩০ হাজার ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপে করোনার বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজন বিশেষ করে, বয়স্ক লোকজন যারা দীর্ঘদিন ধরে কেয়ার সেন্টারে আছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা আগে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
টিটিএন/এমকেএইচ