লাইফস্টাইল

যেসব আলু শরীরের জন্য ক্ষতিকর

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যেন আলু না থাকলেই নয়। আলু যেমন সবজি হিসাবে মাছ-মাংস বা অন্যান্য তরকারির সাথে গ্রহণ করা হয়; তেমনই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ওয়েজেস, পটেটো চিপস্ ইত্যাদি বিভিন্ন মুখরোচক প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরিতেও আলু মুখ্য উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

Advertisement

আলু বিশ্বে চাষযোগ্য এক ভোজ্য উদ্ভিদ কন্দ, যার বৈজ্ঞানিক পরিচিতি ‘সোলানাম টিউবারোসাম’ নামে। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশ থেকে প্রথম উদ্ভুত এ সবজি এখন বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬০টি দেশে চাষ করা হয়।

রং, আকার এবং পুষ্টি উপাদান বিবেচনায় আলুর প্রায় ১৫০০-৪০০০ বিভিন্ন জাত রয়েছে। খাদ্য হিসাবে আলু সহজপাচ্য এবং কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি বিভিন্ন খনিজ লবণ এবং ভিটামিনেও ভরপুর। তবে সবুজ দাগযুক্ত, অঙ্কুর বা গ্যাঁজ হওয়া আলু কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

আলুতে দুই ধরনের বিষ কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই থাকে, এগুলো হলো সোলানাইন এবং ক্যাকোনাইন। এদেরকে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড বলা হয়। গ্লাইকোসাইডিক লিগ্যান্ড হিসাবে সোলানিডিনের সমন্বয়ে গঠিত সোলানাইন এবং ক্যাকোনাইন হলো ছয়টি বিভিন্ন গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড।

Advertisement

সম্পূর্ণ আলু গাছেই এরকম নাইট্রোজেনঘটিত গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে গাছের পাতা, ফুল, কাণ্ড ও আলুর চোখ, গ্যাঁজ কিংবা খোসায় গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই আলু গাছের কাণ্ড কিংবা পাতা খাওয়া উচিত নয়।

আলু ছাড়াও বেগুনে এবং অপরিপক্ক টমেটোতেও সোলানাইন পাওয়া যায়। এটি পানি, ক্ষয়কারী দ্রবণ এবং হিমোলাইটিক দ্রবণের মাঝে দ্রবণীয়, তবে এসিটিক অ্যাসিড সহযোগে উত্তপ্ত করা হলে সোলানাইন ধ্বংস হতে পারে। সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে প্রায় ১০ মিলিগ্রাম সোলানাইন এবং ১.৬ থেকে ১০.৫ মিলিগ্রাম ক্যাকোনাইন থাকে।

সোলানাইন ও ক্যাকোনাইন কিন্তু বেশ নিউরোটক্সিক। অতিরিক্ত পরিমাণে সবুজ ও গ্যাঁজ হওয়া আলু খেলে পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, জ্বর, মাথাব্যথা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড তাপে বিনষ্ট হয় না, তাই আলু রান্নার পূর্বে খোসা ছাড়িয়ে সবুজ অংশ ফেলে রান্না করা উচিত।

আলোর সংস্পর্শে আলুতে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে অপরিপক্ক বা অঙ্কুরিত প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে সোলানাইনের পরিমাণ ১০ মিলিগ্রাম থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য আলু সব সময় অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়।

Advertisement

অনেকে আবার একসাথে প্রচুর পরিমাণ আলু কিনে সংরক্ষণ করে রাখেন। এতে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের সংরক্ষণজনিত কারণে বেশ কিছু পরিমাণ আলু পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এরকম আলুতেও গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডের পরিমাণ বেশ বৃদ্ধি পায়। তাই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ আলু একসাথে সংরক্ষণ করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

এসইউ/এমকেএইচ