জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও করোনা পজিটিভ যাত্রী পরিবহন, ঝুঁকিতে ‍সুস্থরা

করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না, এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ একাধিক এয়ারলাইন্স প্রতিদিনই নেগেটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে প্রতিদিন গড়ে চার হাজারেরও বেশি যাত্রী আসছেন। সংখ্যায় কম হলেও কিছুসংখ্যক যাত্রী করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই চলে আসছেন। শুধু তাই নয়, এয়ারলাইন্সগুলোতে করোনা পজিটিভ রোগীও পরিবহন করা হচ্ছে।

Advertisement

গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ১৭ জন করোনা পজিটিভ রোগী অসুস্থতা নিয়েই বিমানবন্দরে আসেন। করোনা পজিটিভ রোগীদের অধিকাংশই এনেছে সৌদি এয়ারলাইন্স। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ একাধিক এয়ারলাইন্সে করোনা পজিটিভ রোগী পরিবহন করা হয়। গত এক সপ্তাহে বিমানবন্দরে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করার অভিযোগে মালদ্বিভিয়ান এয়ারলাইন্স (১১৮ জনের জন্য ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে (৬ জনের জন্য ৩০ হাজার টাকা) জরিমানা করে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘করোনা সনদ ছাড়া কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এয়ারলাইন্সগুলো কী স্বার্থে করোনা পজিটিভ ও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়াই যাত্রীদের নিয়ে আসছে? করোনা পজিটিভ রোগী ফ্লাইটে নিয়ে আসার কারণে অন্যান্য সুস্থ রোগীদেরও মহামারি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।’

তিনি জানান, করোনা সনদ ছাড়া যেন এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী পরিবহন না করে সেজন্য তারা সবসময় সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে জানিয়ে আসছেন। সিভিল এভিয়েশন অথরিটিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আর্থিক জরিমানা ও কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

Advertisement

বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিনিয়র হেলথ অফিসার ডা. হাসান কাওসার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (১২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে আজ ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত) বিভিন্ন ফ্লাইটে মোট চার হাজার ১৩৫ জন যাত্রী এসেছেন। তাদের মধ্যে ৮টি ফ্লাইটের ২৩ জন যাত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আশকোনা হাজী ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়। একজন যাত্রীর করোনা পজিটিভ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার করা হয়।

বিভিন্ন ফ্লাইটে আসা যাত্রীদের মধ্যে দুবাই থেকে আগত এমিরেটস এয়ারলাইন্স (ইকে৫০২)তে একজন, দোহা থেকে আগত (কিউআর৬৪০) তে দুইজন, কুয়ালালামপুর থেকে আগত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি০৮৭)তে একজন, রিয়াদ থেকে আগত (বিজি৪০৪০)তে ১০ জন, দোহা থেকে আগত (কিউআর৬৩৮)তে একজন, রিয়াদ থেকে আগত সৌদি এয়ারলাইন্স(এসবি-৮০৪)তে একজন, জেদ্দা থেকে আগত (এসবি-৮০২০) তে চারজন এবং শারজাহ থেকে আগত (জি-৯৫১৭) এয়ারলােইন্সের তিনজনকে একই কোয়ারেনন্টাইন সেন্টারে পাঠানো হয়।

বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জামিল আহমেদ বেলা ১১টায় জানান, করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী পেলে তারা আইনুসারে আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তির ব্যবস্থা করছেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে আসতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে দেশি-বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্স করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া বাংলাদেশে যাত্রী আনতে পারবে না।

Advertisement

বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইটস্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আসতে হলে সব যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে এবং নেগেটিভ ফল পাওয়া যাত্রীরা আসতে পারবেন। বিমানবন্দরে সেই নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরেও যাত্রীর লক্ষণ ও উগসর্গ আছে কিনা তা অনুসন্ধান করা হবে। কোনো যাত্রীর উপসর্গ দেখা গেলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও তাকে সরাসরি নির্ধারিত হাসপতালে পরবর্তী পরীক্ষা ও চিকিৎসা এবং আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হবে।

তবে কোনো যাত্রীর মধ্যে উপসর্গ দেখা না গেলে তাকে নিজ বাড়িতে গিয়ে ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। বাংলাদেশি শ্রমিক যাদের বিএমইটি কার্ড আছে, তারা যে দেশ থেকে আসবেন সে দেশে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য না হলে অ্যান্টিজেন বা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন।

তবে শিডিউল বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছাড়া রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ত্রাণ, মানবিক সাহায্য, প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত আনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কূটনৈতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক মিশনগুলোর কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও পিসিআর ল্যাবে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে, যা যাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে। বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসতে হলে তাদেরও পিসিআর ল্যাবে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। যদি বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনার উপসর্গ না দেখা যায় তাহলে বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ১৪ দিনের কম সময় অবস্থান করতে পারবেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে পারবেন। যদি করোনার উপসর্গ পাওয়া যায় তবে তাকে পরবর্তী পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে।

এমইউ/ইএ/এমএস