সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় জনপদে প্রতিনিয়ত জীবিকার জন্য যুদ্ধ করছে হতদরিদ্র মানুষ। নদী থেকে মাছ ও কাকড়া ধরে এবং ইটভাটায় কাজ করে চলে এসব হতদরিদ্র মানুষের সংসার।
Advertisement
শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, রমজাননগর, কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নগুলো মূলত সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ। চুনকুড়ি নদীতে জাল ফেলে হরিণা চিংড়ি, বেলেসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরেন। গ্রামেগঞ্জে সেই মাছ বিক্রির টাকা দিয়েই চলে এসব মানুষের সংসার।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি নদীর তীরে চুনকুড়ি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস শান্তি রানী মন্ডলের।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল জানান, শান্তি রানী খুব অসহায়। নদীতে মাছ ধরেই সংসার চলে এই সংগ্রামী নারীর। বসবাস করেন চুনকুড়ি নদীর তীরে আশ্রয়কেন্দ্রে। ছোট হরিণা চিংড়ি, বেলে মাছসহ বিভিন্ন দেশীয় মাছ ধরার পর গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। সেখান থেকে ৫০-১০০ টাকা বা ১২০ টাকা রোজগার হয়। সেই টাকায় চাল-ডাল তরকারি কিনে সংসার চালান তিনি।
Advertisement
উপকূলের পাঁচটি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৯৭৬টি পরিবার একেবারেই হতদরিদ্র। যাদের মাসিক আয় সাত হাজার টাকার নিচে। এসব হতদরিদ্র মানুষ সুন্দরবনে গিয়ে মধু সংগ্রহ, কাকড়া ধরা ও ইটের ভাটায় কাজ করেন।
উপকুলীয় পাঁচটি ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি এনজিও সংস্থা নওয়াবেকী গণমূখী ফাউন্ডেশন (এনজিএফ)। Pathways to prosperity for extremely poor people (ppepp) প্রকল্পের আওতায় পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশানের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে সংস্থাটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে তালিকা প্রণয়ন করেছে।
তালিকায় পদ্মপুকুর ইউনিয়নে ২৩৯৫টি, গাবুরা ইউনিয়নে ৪০১৭টি, রমজাননগর ইউনিয়নে ২৫৬০টি, কৈখালী ইউনিয়নে ২৭১৯টি ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ৪২৮৫টি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব পরিবারের মাসিক আয় সাত হাজার টাকারও নিচে ও তারা দিনমজুর শেণির।
প্রকল্পের টেকনিকেল অফিসার (কমিউনিটি মবিলাইজেশান) অভিজিৎ নন্দী জানান, পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ২০ শতকের নিচে জায়গা, সাত হাজারের নিচে মাসিক আয়, মাসিক মাথাপিছু আয় ১৮১৫ টাকা, প্রতিবন্ধি ব্যক্তি, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা এই পাঁচ ক্যাটাগরির মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরি মিলে গেলে সেই পরিবারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় জনপদের পদ্মপুকুর, গাবুরা, রমজাননগর, কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ১৫৯৭৬টি পরিবারকে বাছাই করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকা থেকে সামান্য কিছু বাদ যেতে পারে, যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। এ সকল পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস দিনমজুর। এসব পরিবারকে সহায়তার জন্য আমরা ছয়টি কমপোনেন্ট নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, প্রকল্পটি সুবিধাভোগীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/এমএস