বিশেষ প্রতিবেদন

স্বাচিপ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

দীর্ঘ এক যুগ পর শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।কমিটির কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বুধবার জাগো নিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থেকে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। সম্মেলন নিয়ে স্বাচিপে সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে (সভাপতি ও মহাসচিব) সরাসরি ইলেকশন নাকি সিলেকশন বাই ইলেকশন হবে তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কানাঘুষা চলছে। ইলেকশন হবে কি হবে না এ নিয়ে স্বাচিপের শীর্ষ নেতা-কর্মীদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজনের বিষয়টি জুনিয়র সিনিয়র সবার কাছে ওপেন সিক্রেট। শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনে পক্ষে, অপর পক্ষ  ভোটার তালিকা ক্রুটিপূর্ণের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে দু’পক্ষেরই তীব্র মতবিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলেকশন বা সিলেকশন যে নির্দেশনা দেবেন তা মাথা পেতে মেনে নিতে রাজি সকলেই।  স্বাচিপের নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে ডা. সিএম দেলওয়ার রানাকে চেয়ারম্যান, ডা. মোসাদ্দেক আহমেদকে সদস্যসচিব ও অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানকে সদস্য করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।তবে মাত্র একদিন পরে সম্মেলন ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। গত কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে বলেছেন এমন দাবি করা হয়েছে। সর্বশেষ দু’দিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিজেও কয়েকজন স্বাচিপ নেতা, নির্বাচন কমিশন সদস্যদের ডেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সরাসরি নির্বাচন করার কথা বলেছেন। সেদিন একটি পক্ষ থেকে জানানো হয়; ৯ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ২৫ হাজার টাকায় নমিনেশন বিক্রি করবে। কিন্তু তাদের এ দুই দিন নমিনেশন বিক্রি করতে দেখা যায়নি।স্বাচিপের আসন্ন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূ্ঁইয়ার কাছে ইলেকশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে স্বাচিপের জাতীয় কাউন্সিলদের বৈঠকে শতকরা ৯০ ভাগ নেতাকর্মী ভোটার তালিকা ক্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।  কেন্দ্রীয় কমিটিও এ ভোটার তালিকায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মহাসচিব পদের অন্যতম দাবিদার অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে। ভোটার তালিকা সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত নয় এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই ভোটার তালিকা ইসি মিটিং এ পাস হয়েছে। নির্বাচন হলে এটাই এখন বৈধ ভোটার তালিকা । একাধিক প্রার্থীতা সম্পর্কে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০০৩ সালে মহাসচিব পদে তিনি যখন নির্বাচন করেন তখন বেশিরভাগ প্রার্থীই তার কর্মী ছিলেন। গত ১২ বছর সম্মেলন না হওয়ায় কর্মীরাও এখন মহাসচিব পদের দাবিদার হয়েছেন। তবে ইলেকশন কিংবা সিলেকশন যাই হোকনা কেন বিগত সময়ের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় তাকে মূল্যায়ন করা হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। মহাসচিব তালিকায় নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ডা. মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সম্মেলনের দিন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার লক্ষ্যে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ১৩ হাজারেরও বেশি ভোটারের ভোট কিভাবে নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। একাধিক সূত্র (অসমর্থিত) জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাচিপের শীর্ষ নেতা-অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও অধ্যাপক ডা. কণক কান্তি বড়ুয়াকে ডাকতে পারেন। তখনইতো নেতৃত্ব নির্ধারণে সর্বশেষ নির্দেশনা আসতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাচিপের একাধিক শীর্ষ নেতা অনুমান করছেন শেষ পর্যন্ত হয়তো শেখ হাসিনাই সভাপতি ও মহাসচিবের নাম বলে দিয়ে সিলেশন বাই ইলেকশনের নির্দেশনা দেবেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বলে তারা মন্তব্য করেন। এমইউ/এসএইচএস/জেডএ্ইচ /এএইচ/এমএস

Advertisement