রাতে তুচ্ছ ঘটনায় গালে চড় মারার কারণে স্বামীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নিচে ফেলে তার বুকের উপর উঠে পরনের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করি। ফজরের পর মৃত স্বামীকে একাই টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে মরদেহটি ফেলে ঘরে চলে আসি।বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চাঞ্চল্যকর হত্যার দায় স্বীকার করে স্বামী হত্যার এমন রোমহর্ষক বর্ণনা দেন নিহত রাজমিস্ত্রী রুবেল আহমদ ওরফে রাসেলের (২৬) নববিবাহিত স্ত্রী রুশনা বেগম (১৯)। আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম তার খাসকামরায় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া রুশনা বেগমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বুধবার সন্ধ্যায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় ধরে জবানবন্দি দেন রুশনা। নববধূ রুশনা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মণ্ডলীভোগ (কৈতক) গ্রামের মোস্তফা মিয়ার মেয়ে। গত শুক্রবার রুশনা বেগমের (১৯) সঙ্গে বিয়ে হয় বালাগঞ্জ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রাজমিস্ত্রী রুবেল আহমদের। বিয়ের পর থেকে রুশনা স্বামী রুবেলের সঙ্গে বাগবাড়ী নরশিংটিলার ঐক্যতান ১২৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিয়ের তিনদিনের মাথায় সোমবার রাতে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ঘাতক স্ত্রী।গত মঙ্গলবার সকালে বাসার সামনে রুবেলের মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর পুলিশ রুশনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ওই সময়ই থানা নিয়ে যান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি। রুশনা বেগমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিম পটোয়ারী জাগো নিউজকে জানান, পারিবারিক কলহের কারণে ঘটনার দিন রাতে স্বামী রুবেল ও স্ত্রী রুশনার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রুবেল স্ত্রীর গালে একটি চড় মারেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রুশনা স্বামী রাসেলকে নিচে ফেলে দিয়ে তার বুকের উপর উঠে পরনের ওড়না দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।তিনি বলেন, তখন রুশনা কোনো উপায় না পেয়ে ফজরের পর স্বামীর মরদেহটি একা টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে ফেলে ঘরে চলে যান। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে বাসার মালিকের মামা বাসার গেইটের সামনে শোয়া অবস্থায় রুবেলকে পড়ে থাকতে দেখে রুশনার ঘরে গিয়ে তাকে খাটে বসা পান। এসময় তিনি তার স্বামী গেইটের সামনে শুয়ে আছেন এ খবর দিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে আসতে বলেন। এ কথা শুনে রুশনা বেগম স্বামী হত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রুবেল আহমদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসাপাতালের মর্গে পাঠায়। বুধবার রুশনা বেগমকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় রুশনা আদালতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। সন্ধ্যায় রুশনার জবানবন্দি শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে জেলে পাঠানো হয়েছে।এসআই আজিম বলেন, এ ঘটনায় নিহত রুবেল আহমদের ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে বুধবার কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৬। ছামির মাহমুদ/এমজেড/এমএস
Advertisement